বান্দরবানের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার জন্য নির্মিত ১১ কোটি টাকার টানেল উদ্বোধনের মাত্র দুই বছরেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। টানেলের ভেতরে পানি চুইয়ে পড়ছে। পরিস্থিতি এমন যে দিন-দুপুরেও গাড়ি চালাতে হেডলাইট জ্বালিয়ে যেতে হয়।
৫২০ ফুট দীর্ঘ এবং ২৫ ফুট প্রশস্ত এই টানেল উদ্বোধনের সময় যানজট কমানো এবং পর্যটন বৃদ্ধির জন্য বেশ প্রশংসিত হয়েছিল। তবে এখন টানেলের মধ্যে কোনো বাতি নেই। দেওয়ালের ফাঁক দিয়ে পানি চুইয়ে পড়ছে। টানেলের মাঝখানে পানি জমে গাড়ি চলাচলের ফলে ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তায় কাদা ও পানি জমে আছে। শত শত শিক্ষার্থী ও সাধারণ যাত্রী বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে এই কাদা-মাখা পথ পার হচ্ছেন।
অটোরিকশা চালক জলিল বলেন, “ঝুঁকি নিয়েই গাড়ি চালাই। ভয় হয়, কখনো টানেল ভেঙ্গে পড়তে পারে। মাত্র দুই বছর আগে নির্মিত হলেও পানি চুইয়ে পড়ছে, মাটি ভেঙ্গে পড়ছে। আমাদের এই দুর্দশার মধ্যেই চলতে হচ্ছে।” বাস স্টেশনের দোকানি শিহাব আহমেদ বলেন, “টানেলটি আমাদের সুবিধার জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু সুবিধা কিছু হয়নি। শুধু জনগণের টাকা অপচয় হয়েছে। এভাবে কি মানুষ নিরাপদে চলতে পারে?”

২০১৮–১৯ অর্থবছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় টানেল নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয়। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে তৎকালীন মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এটি উদ্বোধন করেন। টানেল নির্মাণের কাজ দেওয়া হয়েছিল এমএম ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। প্রতিষ্ঠানের একজন মালিক মং আ মারমা দুই বছর আগে মারা যান। অন্য মালিক রাজু বড়ুয়া বলেন, “এটি মূলত সংযোগ সড়ক। নির্মাণে কোনো অব্যবস্থাপনা হয়নি। তবে পাহাড় ধস এবং ড্রেন পাইপ চুরির কারণে কাদা জমেছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা ও অধিকারকর্মীরা এই ব্যাখ্যা মানতে নারাজ। জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অংচমং মারমা বলেন, “দেওয়ালের ফাঁক দিয়ে পানি পড়ছে। বোঝা যায়, টানেল মানসম্মতভাবে নির্মাণ হয়নি। ভালো নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করলে এভাবে পানি পড়ত না।” স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ১১ কোটি টাকার এই টানেল যাতায়াত সহজ করার ও পর্যটন বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং এটি দুর্বল পরিকল্পনা এবং প্রশ্নবিদ্ধ নির্মাণ মানের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবান ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন ইয়াছির আরাফাত বলেন, “এটি মূলত সংযোগ সড়ক। পরে অনেকেই এটিকে টানেল হিসেবে চিনতে শুরু করেছে। টানেলের জয়েন্ট থেকে পানি পড়ছে। পাহাড় ধসের মাটি বারবার সরিয়ে ফেলতে হয়েছে। রাতে জিও ব্যাগ ও লাইট চুরি হয়ে গেছে।” তিনি আরো বলেন, “কাজ পাঁচ বছর আগে শেষ হয়েছে। উদ্বোধন দুই বছর আগে। টানেল হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। টোলের অংশ পৌরসভা পাবে, আরেকটি অংশ আমাদের কাছে। আশা করি খুব শিগগিরই বিষয়টি সমাধান হবে।

