ঝালকাঠি ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের নতুন ৯ তলা ভবন উদ্বোধনের দুই বছর পার হলেও কার্যক্রম শুরু হয়নি। ৭০ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ভবনে লিফট, বিদ্যুৎ সংযোগ ও যন্ত্রপাতি না থাকায় ভবনটি রোগীদের কোনো কাজে আসছে না। ফলে পুরোনো ভবনের সীমিত জায়গা ও চিকিৎসক সংকটের মধ্যেই চলছে চিকিৎসাসেবা।
২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে তৎকালীন সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু ভবনটির উদ্বোধন করেছিলেন। কিন্তু আজও সেটি অচল।
হাসপাতাল ও গণপূর্ত বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৪ সালে মাত্র ৫০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু হয় ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের। ২০০৩ সালে তা ১০০ শয্যায় উন্নীত হয়। ২০১৮ সালে ২৫০ শয্যা করার জন্য নতুন ৯ তলা ভবনের কাজ শুরু হয়। শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা, কিন্তু নকশা পরিবর্তনের কারণে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৭০ কোটি ৯১ লাখ টাকায়।
২০২৩ সালে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সার্ভিস ভবনের কাজও শুরু হয়। কিন্তু লিফট না থাকায় ও বিদ্যুৎ–পানির সংযোগ সম্পূর্ণ না হওয়ায় নতুন ভবন চালু হয়নি।
গণপূর্ত বিভাগের তথ্য বলছে, চারটি লিফট স্থাপনের জন্য প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৪ কোটি টাকা। পাঁচবার দরপত্র আহ্বান করা হলেও দরদাতাদের প্রস্তাব বেশি হওয়ায় তা বাতিল হয়। সম্প্রতি লিফট স্থাপনের জন্য ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে নতুন দরপত্র আহ্বান করা হবে।
প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কহিনুর এন্টারপ্রাইজের প্রকৌশলী হুমায়ূন কবীর বলেন, “আমরা কাজ শেষ করেছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ভবন বুঝে নেয়নি। ফলে অনেক সরঞ্জাম নষ্ট হচ্ছে।”
বর্তমানে ১০০ শয্যার হাসপাতালটিতে থাকার কথা ১৬ জন চিকিৎসকের। বাস্তবে আছেন মাত্র ৪ জন। রাত ২টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত জরুরি বিভাগ চালাতে হচ্ছে মাত্র দুজন চিকিৎসকের ওপর নির্ভর করে। শিশু, চক্ষু, দন্তসহ বিভিন্ন বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা অশোক কুমার বলেন, “ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে গেলে ডাক্তাররা বরিশালে পাঠিয়ে দেন। ওষুধও বেশিরভাগ কিনতে হয় বাইরে থেকে।”
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ঝালকাঠির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সত্যবান সেনগুপ্ত বলেন, “জেলায় মেডিকেল কলেজের প্রকল্পও স্থানান্তর হয়ে গেছে। নতুন হাসপাতাল ভবনও অচল। চিকিৎসক নেই, যন্ত্রপাতি নেই। ফলে প্রতিদিন শত শত রোগী বরিশাল যেতে বাধ্য হচ্ছেন। দ্রুত লিফট স্থাপন ও ডাক্তার নিয়োগ জরুরি।”
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমানউল্লাহ সরকার জানান, “লিফট স্থাপন না হওয়ায় স্থানান্তর সম্ভব হচ্ছে না। বাজেট অনুমোদন পেলেই দরপত্র আহ্বান করা হবে।”
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মাসুম ইফতেখার বলেন, “ওয়ার্ড ও কেবিন সপ্তম-অষ্টম তলায়। নবম তলায় রয়েছে আইসোলেশন ও ডায়ালাইসিস ইউনিট। লিফট ছাড়া রোগীরা সিঁড়ি দিয়ে উঠতে পারবেন না। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। আশা করছি শিগগিরই সমাধান হবে।”
তিনি আরও জানান, চিকিৎসক সংকটও বড় সমস্যা। বিশেষায়িত চিকিৎসক না থাকায় অনেক রোগীকে বরিশালে পাঠাতে হচ্ছে। তবে সীমিত জনবল দিয়েও সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

