মিয়ানমারভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে নিয়মিত খাদ্য ও ওষুধ পাচ্ছে। একটি সংঘবদ্ধ চক্র ইয়াবা, আইসসহ বিভিন্ন মাদকের বিনিময়ে আলু, চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, ওষুধ, জ্বালানি, ইউরিয়া সারসহ অন্তত ৮-৯ ধরনের পণ্য মিয়ানমারে পাচার করছে। সীমান্ত সংশ্লিষ্টরা এটিকে অবৈধ ‘বিনিময় প্রথা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গভীর সাগরপথ ব্যবহার করে পাচারকারীরা পণ্য ও মাদক বিনিময় করছে। আরাকান আর্মি মাদক ও মানবপাচারকে রসদ জোগানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। এই রুট চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নজরদারি ও অভিযান জোরদার করেছে।
কোস্টগার্ডের তথ্য অনুযায়ী, ৬ সেপ্টেম্বর সেন্টমার্টিনের ছেড়া দ্বীপসংলগ্ন সমুদ্র এলাকা থেকে ৪০০ বস্তা আলু ও ৪০ বস্তা রসুন জব্দ করা হয়, যা শুল্ক ফাঁকি দিয়ে মিয়ানমার যাচ্ছিল। ৪ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারে আরো একটি অভিযানে ১৯৭ বস্তা সিমেন্ট, ১৯৭ কেজি পেরেক, ১৩০ কার্টন ওষুধ ও ১,১৩৬ পিস জর্দা জব্দ করা হয়। একইভাবে ৩০ আগস্ট নাজিরারটেক এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছয় লাখ টাকার সমমূল্যের ৮৭ বস্তা আলু ও ৯০০টি শীতলপাটি জব্দ করা হয়।
আরেক অভিযানে ২৯ আগস্ট কর্ণফুলী চ্যানেল থেকে ৬২০ বস্তা ডাল, ১০ বস্তা আদা, ৪৮০টি লুঙ্গি, ৪০০টি শাড়ি এবং পাচার কাজে ব্যবহৃত কার্গো বোটসহ সাত পাচারকারীকে আটক করা হয়। এসব অভিযানে চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেটি থেকে মিয়ানমারগামী জলযান চিহ্নিত করা হয়েছে, যেগুলো মানবপাচারেও ব্যবহৃত হয়। পাচারকারীরা রোহিঙ্গাদের টাকার বিনিময়ে এনে প্রথমে কক্সবাজারের ক্যাম্পে রাখে, পরে তাদের মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে পাঠানো হয়।
টেকনাফ স্থলবন্দর দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার বাণিজ্যের প্রধান রুট হলেও বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে। রাখাইন অঞ্চলের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বাণিজ্য কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আরাকান আর্মি মূলত মাদক ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল। মাদক ধরার পরিমাণ বাড়লেও তা পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি।
বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, এই পাচারচক্র জাতীয় নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। বিজিবি, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী সমন্বিতভাবে গভীর সমুদ্রে নজরদারি চালাচ্ছে।