এবার ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ফাঁস হয়েছে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলা এলজিইডির হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা শাহ আলম ও কম্পিউটার অপারেটর তাহমিনা আক্তারের। দু’টি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে তাদের বিষয়ে মুখ খুলেছেন একাধিক ঠিকাদার।
জানা গেছে, ত্রিশাল উপজেলা এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মুহাম্মদ শফিউল্লাহ খন্দকারকে ঠিকাদাররা প্রকল্প বরাদ্দের ২ শতাংশ কমিশন না দিলে আটকে দিতেন যে কোনো বিল। ঢাকার প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে তহবিল আনার জন্যও ঠিকাদারের কাছ থেকে নেওয়া হতো টাকা। তাঁর ঘুষকাণ্ডকে ন্যায্য মনে করে অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁরই পথে হাঁটতে শুরু করেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী ঠিকাদারদের।
সম্প্রতি প্রকৌশলী মুহাম্মদ শফিউল্লাহ খন্দকারের ঘুষকাণ্ড নিয়ে ‘বরাদ্দের ২ শতাংশ না দিলেই কাজে বাগড়া প্রকৌশলীর’ শিরোনামে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পরপরই ফাঁস হয় হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা শাহ আলম ও কম্পিউটার অপারেটর তাহমিনা আক্তারের ঘুষ নেওয়ার ভিডিও।
ঠিকাদাররা জানান, নতুন কাজের চুক্তি, কার্যাদেশ ও অন্যান্য কাগজপত্র প্রস্তুত করতে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা শাহ আলমকে। তবে বরাদ্দের টাকার পরিমাণ বেশি হলে সেই ক্ষেত্রে বেড়ে যায় ঘুষের অঙ্ক। আগে প্রতিটি বিলের বিপরীতে হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা শাহ আলমকে শতকরা ৫০ পয়সা ঘুষ দিতে হতো। এখন তাঁকে দিতে হয় ১ শতাংশ। অপরদিকে কম্পিউটার অপারেটর সম্পা বেগমকে যে কোনো আবেদন/চিঠি/ফরওয়ার্ডিং/প্রত্যয়ন অথবা আবেদনের টাইপিং বাবদ দিতে হয় ২৫ টাকা। এছাড়া যে কোনো বিল টাইপিংয়ের জন্য দিতে হয় ১ থেকে ২ হাজার টাকা।
ঠিকাদার হানিফ বলেন, নতুন কাজের চুক্তি, কার্যাদেশ ও অন্যান্য কাগজপত্র প্রস্তুত করতে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় শাহ আলমকে। বরাদ্দের টাকার পরিমাণ বেশি হলে বেড়ে যায় ঘুষের অঙ্ক।
গণমাধ্যমের হাতে আসা এক ভিডিওতে দেখা যায়, হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা শাহ আলম এক ঠিকাদারের কাছ থেকে ঘুষের টাকা নিচ্ছেন। ঠিকাদারকে বলছেন আরও ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ঠিকাদার জানান, ঘুষের টাকা দেওয়ার পর দ্রুত সম্পন্ন হয় তাঁর কাজ।
প্রতিবেদক জানতে চাইলে হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, ‘কোনো ফাইল আটকে রাখি না। খুশি হয়ে কেউ কিছু দিলে আমি নিই। জোর করে কিংবা হয়রানি করে কারও কাছ থেকে টাকা নিই না।’ শেষে তিনি বলেন, ‘ভাই, আমি সাধারণ কর্মচারী আমার বিষয়টি মিডিয়াতে প্রচার কইরেন না।’
অপর ভিডিওতে দেখা যায়, এক ঠিকাদারকে কম্পিউটার অপারেটর তাহমিনা আক্তার বলছেন, ‘টাকা ছাড়া আমি কোনো কাজ করতে পারব না। একটা স্কুলের টেস্টের সমস্ত রিপোর্ট করে দিলাম, টাকা দেন।’ এরপর ঠিকাদার ১ হাজার টাকা দেওয়াতে তিনি নাখোশ স্বরে বলেন, ‘মাত্র ১ হাজার টাকা দিলেন? এর আগের কাজে একটি টাকাও পাইনি।’
এই বিষয়ে কম্পিউটার অপারেটর তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘তাদের কাজটা আমি কষ্ট করে দেই। এতে খুশি হয়ে তারা যা দেন, তাই নিই।’
এদিকে ঘুষকাণ্ড নিয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর সংবাদ প্রকাশের পরে ১০ সেপ্টেম্বর বদলি হয়ে চলে গেছেন প্রকৌশলী মুহাম্মদ শফিউল্লাহ খন্দকার। তাঁর বর্তমান কর্মস্থল কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায়।
ঘুষের ভিডিও ফাঁস হওয়ার বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ময়মনসিংহ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী সালমান রহমান রাসেলের ভাষ্য হলো, দাপ্তরিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রকৌশলী শফিউল্লাহর বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা, সে ব্যাপারে তিনি বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ঢাকা অফিস।

