একটি প্রতিষ্ঠানের ২৯৯ কোটি টাকার আয়কর মাত্র ৩৩ কোটি টাকায় কমিয়ে দেওয়ার ঘটনায় এনবিআরের দুই কর কর্মকর্তা শাস্তি পেয়েছেন। এনবিআরের গোয়েন্দা তদন্তে উঠে এসেছে, এই অনিয়মের বিনিময়ে তারা ৩৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন।
শাস্তি হিসেবে নোয়াখালী কর অঞ্চলের যুগ্ম কর কমিশনার মো. জাহাঙ্গীর আলমকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। ফরিদপুর কর অঞ্চলের অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার মোহাম্মদ মাসুদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
তদন্তে জানা গেছে, ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলম আগে চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১ এবং পরে ঢাকা কর অঞ্চল-১৮-এ কর্মরত ছিলেন। ২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর তিনি ঢাকায় যোগ দেন। চলতি বছরের ৭ জুলাই পদোন্নতি পেয়ে নোয়াখালীর পরিদর্শী রেঞ্জ-৩ এ যোগ দেন। অন্যদিকে মাসুদুর রহমানকে গত ২০ আগস্ট ঢাকা কর অঞ্চল-১৮ থেকে বদলি করে ফরিদপুরে পাঠানো হয়।
অনিয়মে জড়িত প্রতিষ্ঠান হলো জোবাইদা করিম জুট মিলস লিমিটেড। ওই কোম্পানির দুই করবর্ষের আয়কর নির্ধারিত ছিল ২৯৯ কোটি টাকা। নিয়ম অনুযায়ী আপিলাত ট্রাইব্যুনাল কর পুনর্নির্ধারণ করলে তা সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলে পাঠানো হয়। সে সময় উপ-কর কমিশনার হিসেবে দায়িত্বে থাকা জাহাঙ্গীর আলম কোম্পানিকে কর কমিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন এবং ৩০ লাখ টাকা নেন।
পদোন্নতির পর তিনি বদলির সুযোগ কাজে লাগিয়ে মাসুদুর রহমানকে দিয়ে অর্ডারশিট তৈরি করান। এতে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশনা উপেক্ষা করে মাত্র দুই দিনের মধ্যে ব্যাকডেটে সই করে ২৯৯ কোটি টাকার কর কমে দাঁড়ায় ৩৩ কোটি টাকা। এই প্রক্রিয়ায় জাহাঙ্গীর নেন ৩০ লাখ এবং মাসুদ ৫ লাখ টাকা। তবে মাসুদুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “জাহাঙ্গীর আলমের অনুরোধে শুধু অর্ডারশিট করেছি, অন্য কিছু জানি না।”
ঢাকা কর অঞ্চল-১৮-এর কমিশনার বিষয়টি প্রথম নজরে আনেন। পরে এনবিআরের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই করে অনিয়ম নিশ্চিত করেন। যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও জাহাঙ্গীর আলমের ফোন বন্ধ পাওয়া যায় এবং তিনি কোনো বার্তার জবাব দেননি।
সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪৫ ধারায় জাহাঙ্গীর আলমকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ১২ ধারা অনুযায়ী মাসুদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তকালীন তিনি খোরপোশ ভাতা পাবেন।

