ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের সম্ভাবনা বিশাল হলেও বাংলাদেশ এখনো তা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না। বর্তমানে আর্থিক খাতের মাত্র ২৭-২৮ শতাংশ লেনদেন হচ্ছে ডিজিটাল মাধ্যমে। বাকি অংশ রয়ে গেছে প্রথাগত ব্যাংকিংয়ের ওপর নির্ভরশীল। এর পেছনে রয়েছে সহায়ক নীতির ঘাটতি, গ্রাহকের আস্থার সংকট, দুর্বল অবকাঠামো, সমন্বয়ের অভাব এবং সাইবার প্রতারণার ভয়। শুধু প্রতারণামূলক লেনদেনেই প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ কোটি টাকা হারাচ্ছে গ্রাহকরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক ফোকাস গ্রুপ আলোচনায় উঠে আসে এসব তথ্য। আলোচনার শিরোনাম ছিল ‘সবার জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিং: আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ব্যবধান দূরীকরণ’। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রবি আজিয়াটার হেড অব কমার্শিয়াল পার্টনারশিপস সানজিদ হাসান। তিনি বলেন, প্রচলিত ব্যাংকিংয়ে আস্থার ঘাটতির কারণে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে এ সুযোগ কাজে লাগাতে হলে শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলা জরুরি। নইলে পুরো খাত বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি আরও বাড়ানোর ওপর জোর দেন তিনি।
প্রবন্ধে তুলে ধরা হয়, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে দ্রুত বাড়ছে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের বাজার। ২০২৫ সালে এ অঞ্চলে বাজারের আকার দাঁড়াবে ৪ হাজার ৬৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, আর ২০৩৩ সালে তা বেড়ে হবে ১১ হাজার ২৩৮ মিলিয়ন। বাংলাদেশের জন্যও বড় সম্ভাবনা রয়েছে। এ খাতের বাজার ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে পারে। তবে এর জন্য সমন্বিত সাইবার নিরাপত্তা অবকাঠামো গড়ে তোলা অপরিহার্য।
অনুষ্ঠানে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, দেশে ২০১১ সালে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস চালু হয়। কিন্তু এখনো মাত্র ৫৪ শতাংশ মানুষ এ সুবিধা ব্যবহার করছে। তিনি মনে করেন, সাইবার নিরাপত্তার দুর্বলতা ও আস্থাহীনতার কারণে পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ব্যাংক, ফিনটেক, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং ভোক্তার অধিকার রক্ষায় সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, সরকার, বেসরকারি খাত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কাজ করছে। তিনি জানান, অন্তর্ভুক্তি, অভিগম্যতা, একত্রীকরণ ও বিস্তার—এই চারটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় নতুন অর্ডিন্যান্স এক মাসের মধ্যেই কার্যকর হতে পারে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এজাজুল ইসলাম বলেন, আগস্ট পর্যন্ত দেশে ৩ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার মানি সার্কুলেশন হয়েছে। এর মধ্যে ২ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা রয়েছে ব্যাংকের বাইরে সাধারণ মানুষের হাতে। তিনি বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের প্রসার অপরিহার্য।
ডিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (ডিবি) মো. ইলিয়াস জিকো বলেন, আর্থিক খাতে ডিজিটাল সেবার অপব্যবহারে প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ কোটি টাকা জালিয়াতি হচ্ছে। গ্রাহকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের নিয়মিত নবায়নকে একটি কার্যকর সমাধান হিসেবে প্রস্তাব করেন।

