জুলাই আন্দোলনের সময় বিক্ষোভ দমন নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। গত বছরের ৪ আগস্ট রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্দোলনকারীদের দমনে সেনাবাহিনী ব্যবহার ও শক্ত হাতে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারেক সিদ্দিকী। তিনি সরাসরি বলেন, গুলি চালিয়ে কয়েকজনকে মেরে ফেললে বিক্ষোভ নিজে থেকেই থেমে যাবে।
সেদিন রাতের বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও শেখ হাসিনাকে কঠোর অবস্থান নিতে বলেন। এর পরদিন ৫ আগস্ট ঢাকাসহ সারা দেশে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানো হয়। এতে শত শত মানুষ নিহত হন। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আন্দোলন দমনে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেন। ওই বৈঠকে তার পদত্যাগের প্রসঙ্গ উঠলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, যা হওয়ার হবে, তিনি ক্ষমতা ছাড়বেন না। তখন সেনাবাহিনীকে আরও কঠোর হতে নির্দেশ দেন তিনি।
এই তথ্য উঠে এসেছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায়। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করেছে। মামলার একমাত্র আসামি জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তার বিরুদ্ধে আটটি অভিযোগ আনা হয়েছে। ৩৯ পৃষ্ঠার এ অভিযোগপত্রে ২০ জন সাক্ষীর নাম রয়েছে। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর ইনুকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ অভিযোগ আমলে নিয়েছে।
অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, জুলাই আন্দোলনের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ ছাড়াও পিলখানা হত্যাকাণ্ড, বিরোধীদের দমনে বিচারপতিদের পুরস্কার দেওয়া, বিএনপি চেয়ারপারসনকে সাজা দিয়ে বিচারপতির কাছ থেকে উপঢৌকন নেওয়া, প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা এবং বিচারপতি খায়রুল হকের প্রতারণাসহ নানা অপকর্ম চালিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার।
প্রসিকিউশনের অভিযোগে বলা হয়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও ১৪ দলীয় জোটের নেতারা দলগতভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধের সিদ্ধান্ত নেন। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বেও আন্দোলন দমনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা হয়।

