হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সবুজ চা-বাগান আর তার বুক চিরে বয়ে যাওয়া ছড়াগুলো একসময় ছিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক। কিন্তু সেই সৌন্দর্য এখন বিলীন হয়ে যাচ্ছে অবৈধ সিলিকা বালু উত্তোলনের কারণে। রাতের আঁধারে এসব ছড়া থেকে বালু লুটে নেওয়া হচ্ছে অগণিত ট্রাকভর্তি বালু, আর তার সঙ্গে ধ্বংস হচ্ছে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য।
প্রশাসন একাধিকবার অভিযান চালালেও থামানো যাচ্ছে না এই বালু লুট। ফলে চুনারুঘাটের পরিবেশ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তৈরি হয়েছে গভীর উদ্বেগ।
সিলেট অঞ্চলে পাথর ও বালু লুট নতুন নয়। প্রশাসনের পদক্ষেপে কিছু সময়ের জন্য এ লুটপাট কমলেও তা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়নি। এক জায়গায় অভিযান চালালে আরেক জায়গায় শুরু হয় নতুন লুট। রাজনৈতিক প্রভাব ও আশ্রয়ে গড়ে ওঠা এই চক্রগুলোর কারণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। চুনারুঘাটের সিলিকা বালু লুটও সেই একই চিত্রের প্রতিচ্ছবি।
মূল্যবান এই সিলিকা বালুর কারণে চুনারুঘাটের ছড়াগুলোর তলদেশ গভীর হচ্ছে, দুই তীর ভেঙে পড়ছে, টিলাগুলো ধসে যাচ্ছে। ফলে ছড়াগুলো বিশাল খাদে পরিণত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চা-বাগানের গাছপালা, চা–শ্রমিকদের বসতবাড়ি এবং স্থানীয় পরিবেশ।
চুনারুঘাটের গিলানী, বদরগাজী, আমপারা ও সুতাংসহ অন্তত ১৫ থেকে ২০টি ছড়া থেকে প্রতিনিয়ত বালু তোলা হচ্ছে। অথচ এসব ছড়া কাচ, নির্মাণসামগ্রীসহ বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত সিলিকা বালুর আধার। বাংলাদেশ খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর অনুমোদন ছাড়া এসব বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ অবৈধ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় এই লুটপাট চলছে। অভিযোগ রয়েছে, বিএনপির নেতা-কর্মীদের একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে এসব ছড়ার নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। সাধারণ মানুষ এদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পান।
সম্প্রতি স্থানীয় প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ১৪ জনকে আটক করে কারাদণ্ড দিয়েছে। তবে তারা মূল সিন্ডিকেটের নয়, কেবল নিম্নস্তরের শ্রমিক বা কর্মচারী। অভিযানে মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনও স্বীকার করছে, দূরবর্তী ও দুর্গম এলাকা হওয়ায় নিয়মিত অভিযান চালানো কঠিন।
পরিবেশবিদ ও সচেতন নাগরিকদের মতে, এই অবৈধ লুট বন্ধ করতে হলে সিন্ডিকেটের মূল নেতাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রশাসন যদি রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে উঠে ব্যবস্থা নেয়, তবেই রক্ষা পাবে চুনারুঘাটের প্রকৃতি। অন্যথায় মূল্যবান এই প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাবে মানুষের লোভের আগুনে।