পশ্চিমাঞ্চল রেলের অফিসে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভয়াবহ ধরনের দুর্নীতি ধরা পড়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, ৫০টি ভিআইপি পর্দা কেনার জন্য ৪৪ লাখ ৪১ হাজার ৩০০ টাকা খরচ দেখানো হয়েছিল, যা অনুযায়ী একটি পর্দার দাম দাঁড়ায় ৮৮ হাজার ৮২৬ টাকা। শুধু তাই নয়, বাজারে মাত্র ১৭৩ টাকার তালা কেনা হয়েছে ৫ হাজার ৫৯০ টাকায়, ২৬০ টাকার বালতি কেনা হয়েছে ১ হাজার ৮৯০ টাকায় এবং ৯৮ টাকার ঝাড়ু কেনা হয়েছে ১ হাজার ৪৪০ টাকায়।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই ঘটনা নিয়ে বুধবার (১৫ অক্টোবর) মামলা করেছেন। মামলায় পশ্চিমাঞ্চল রেলের সাবেক দুই মহাব্যবস্থাপকসহ ১৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারে বলা হয়েছে, ১৭ ধরনের পণ্যের কেনাকাটায় মোট ২ কোটি ১৮ লাখ ১৪ হাজার ১৯৬ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আছে।
দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. রোকনুজ্জামান বাদী হয়ে মামলাটি রাজশাহীর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দায়ের করেছেন। দুদক জানায়, আসামিরা বাজারমূল্যের চেয়ে ১৫ থেকে ৩৩ গুণ বেশি মূল্য দেখিয়ে সরকারি তহবিল আত্মসাৎ করেছেন। রেলের অভ্যন্তরীণ তদন্তেও এই ভয়াবহ অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তদন্তে প্রকাশ, প্রতিটি তালার প্রকৃত দাম ১৭৩ টাকা হলেও ঠিকাদারকে ৫ হাজার ৫৯০ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। শুধু তালা কেনার ঘটনায়ই প্রায় ১০ লাখ ৮৩ হাজার টাকা লুট হয়েছে। এছাড়া বালতি, বাঁশি, ঝাড়ু, ভিআইপি পর্দা, লাগেজ ট্রলি, ভিজিটিং চেয়ার, পাপোশ, ফটোকপিয়ার ও অন্যান্য ১৩ ধরনের পণ্যে অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাক্কলন ও মূল্যায়ন কমিটি বাজারমূল্য যাচাই না করেই ইচ্ছাকৃতভাবে বেশি দাম নির্ধারণ করে দরপত্র আহ্বান করেছিল। অনুমোদনকারী কর্মকর্তা দরপত্র বাতিল বা পুনরায় আহ্বান করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কোনো পদক্ষেপ নেননি। ঠিকাদার ও রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এই বিশাল তহবিল আত্মসাৎ করা হয়েছে।
দুদকের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন জানান, “মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে এবং পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে।”

