চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ড থেকে প্রতিনিয়ত কনটেইনার গায়েব হচ্ছে। নিলামে ক্রয় করা পণ্য ডেলিভারি নিতে গেলে দেখা যাচ্ছে কনটেইনারটি নেই। এতে নিলামে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীরা চরম হতাশায় পড়ছেন। কাস্টম ও বন্দরের কর্মকর্তাদের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে বারবার।
এর আগে দুটি কনটেইনার খোঁজে না পাওয়ায় বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। চলতি সপ্তাহেও একটি গার্মেন্টস পণ্যের (ফেব্রিক্স) কনটেইনার খোঁজে পাওয়া যায়নি। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা চরম হয়রানি ও হতাশার মধ্যে রয়েছেন। জানা গেছে, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলাম শাখার ই-অকশন ৮/২০২৫, লট নং ওবিপিসি ১/২৩১৮/২১ এর কনটেইনার নং এমএসকেইউ ১০৬৮১৫০ এক্স ৪০, চল্লিশ ফুটের কনটেইনারটি ডেলিভারির জন্য পাওয়া যায়নি।
নিলামে ক্রয়কারী ফারজানা ট্রেডার্স কনটেইনার ক্রয় করার পর শুল্কসহ ৪৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে। ২২ অক্টোবর কনটেইনার ডেলিভারি নিতে জে-আর ইয়ার্ডে গেলে দেখা যায় এটি নেই। জে-আর ইয়ার্ডের কর্মকর্তারা কোনো সুরাহা দিতে না পারায় ২৩ অক্টোবর ফারজানা ট্রেডার্স চট্টগ্রাম কাস্টম কমিশনার বরাবর নিলাম বাতিলের আবেদন করে। এরপর কাস্টম হাউস বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। ফারজানা ট্রেডার্স চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল ম্যানেজার ও নিরাপত্তা পরিচালককে অবহিত করেছে।
ফারজানা ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ সেলিম বলেন, “আমাদের কনটেইনার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নিলামে ক্রয় করার পর ডেলিভারি নিতে গিয়ে দেখা যায় কনটেইনার নেই। এখন কাস্টম ও বন্দরের বিভিন্ন কর্মকর্তার দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। টাকা ফেরত পাবো নাকি কনটেইনার পাবো, তা জানি না। আমরা খুবই চিন্তিত।”
এর আগে দেড় কোটি টাকার কাপড়সহ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দুটি কনটেইনার গায়েব হয়েছিল। নিলামের পর সব শুল্ককর পরিশোধের পরও ডেলিভারির সময় জানা যায়, কনটেইনার দুটি নেই। প্রায় ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো হদিশ মেলেনি। ভুক্তভোগী মো. সেলিম রেজা বলেন, “কাস্টমসের কমিশনার বরাবর তিনটি চিঠি দিয়েছি। আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর্থিক ক্ষতি এক কোটি টাকার বেশি। বারবার চিঠি দেওয়ার পরও টাকা ফেরত পাইনি।” অপর কনটেইনারটি নিলামে ক্রয় করেছিলেন তপন সিংহ। তিনি ৪২ লাখ টাকা শুল্কসহ পরিশোধ করেও কনটেইনার পাননি।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলামকারী ব্যবসায়ীদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াকুব চৌধুরী বলেন, “পরপর কনটেইনার গায়েব হওয়ার ঘটনায় আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। বন্দরের মতো সুরক্ষিত স্থানে কীভাবে কনটেইনার হারানো সম্ভব, তা আমাদের প্রশ্ন। এই ধরনের ঘটনা প্রকাশ হলে দেশের বন্দরের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে জনগণের সামনে পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।”
বন্দরের কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ বলেন, “কনটেইনার বন্দরে না থাকা খুব আশ্চর্যজনক। হয়ত অন্য কোনো ইয়ার্ডে স্থানান্তরিত হয়েছে। গায়েব হওয়া স্বাভাবিক নয়। আমরা পণ্য না পাওয়া গেলে রিফান্ড প্রক্রিয়া শুরু করব। নিলামে ক্রয়কারী টাকা ফেরত পাবেন।”
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, “আগের দুটি কনটেইনার মিসিংয়ের তদন্ত চলছে। নতুন কনটেইনার মিসিং হওয়ার খবর আমার কাছে নেই। তবে কনটেইনারগুলো পাওয়া যাবে আশা করছি। বন্দরে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার কনটেইনার রয়েছে। হ্যান্ডলিংয়ের সময় হয়ত কনটেইনার যে স্থানে থাকার কথা সেখানে নেই। খোঁজা হচ্ছে। মিসিং হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পাওয়া গেলে জানানো হবে।”

