রাজশাহীতে পুলিশের এক উপপরিদর্শকের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়া, আসামিদের ভয়ভীতি দেখানো এবং বাদীপক্ষের হয়ে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের মুখে রয়েছেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) উপপরিদর্শক (এসআই) মহিউদ্দিন, যিনি সম্প্রতি চন্দ্রিমা থানা থেকে বদলি হয়ে বোয়ালিয়া থানায় যোগ দিয়েছেন।
রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মাহমুদ হাসান শিশিল ৫ নভেম্বর আরএমপি কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, এসআই মহিউদ্দিন চার্জশিট দেওয়ার নামে তার কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা নিয়েছেন এবং ফাইনাল রিপোর্টের আশ্বাস দিয়ে আরও দুই লাখ টাকা দাবি করেছেন। বড় কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে তিনি ভয় দেখিয়েছেন যে টাকা না দিলে জেলে পাঠানো হবে।
অভিযোগের সঙ্গে শিশিল বিকাশে টাকা পাঠানোর স্ক্রিনশট, ফোনালাপের রেকর্ড এবং প্রমাণপত্রও জমা দিয়েছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে আরএমপির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, চলতি বছরের ২ জুলাই রাজশাহী নগরের ভদ্রা এলাকার একটি বাসায় যুবলীগ নেতা রনির অবস্থান সংক্রান্ত গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় পুলিশ তল্লাশি চালালেও রনিকে পাওয়া যায়নি। পরে ঐ বাসার মালিক হাবিবা আক্তার মুক্তা ও তার স্বামী জাবেদ আক্তার বেবি শিশিল, তার ভাই সিজার এবং অন্যদের বিরুদ্ধে ২ লাখ টাকা ও ১২ ভরি স্বর্ণ চুরির অভিযোগে মামলা করেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর এসআই মহিউদ্দিন বিভিন্ন কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে আসামিদের কাছ থেকে টাকা আদায় শুরু করেন। ব্যবসায়ী শিশিল জানান, “এসআই মহিউদ্দিন চার্জশিট দেওয়ার নামে বিকাশে টাকা নিয়েছেন এবং চূড়ান্ত প্রতিবেদনের জন্য আরও দুই লাখ টাকা দাবি করেছেন। টাকা না দিলে আমাদের জেলে পাঠানোর হুমকি দেন।”
মামলার অপর আসামি ছাত্রদল নেতা মাহমুদ হাসান লিমন জানান, “চার্জশিট দেওয়ার কথা বলে মহিউদ্দিন আমার কাছ থেকেও নগদ ১৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। পরদিন বিকাশে আরও ৫ হাজার টাকা পাঠাতে হয়েছে। পরে তিনি আবারও দুই লাখ টাকা দাবি করেন।”
এসআই মহিউদ্দিন ও একাধিক আসামির মধ্যে হওয়া ফোনালাপে এসব অর্থ লেনদেন ও হুমকির বিষয়টি উঠে এসেছে। এক রেকর্ডে শোনা যায়, এসআই মহিউদ্দিন বলছেন, “তুমি যে আমার বিকাশে টাকা দিয়েছ, সেই স্ক্রিনশট মানুষের কাছে গেল কীভাবে?” এতে লিমন উত্তরে বলেন, “আপনি চার্জশিটের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন, এতে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে।”
আরেক ফোনালাপে শিশিলকে এসআই মহিউদ্দিন স্বীকার করেন, “আপনাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই, চুরির কিছুই হয়নি।” তবু তিনি চূড়ান্ত প্রতিবেদনের নামে অর্থ দাবি করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
শিশিল আরও দাবি করেন, মামলার বাদী মুক্তার স্বামী জাবেদ আক্তার বেবি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ এবং রাজশাহীর প্রভাবশালী নেতাদের সহযোগী। পারিবারিক বিরোধের জের ধরেই মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।
অভিযোগ আংশিক স্বীকার করে এসআই মহিউদ্দিন জানান, “একজন আসামি নিষেধ করা সত্ত্বেও বিকাশে পাঁচ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন, পরে ফেরত দিয়েছি।” তবে তিনি বাদীপক্ষের হয়ে তদন্ত বা ঘুষ দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেন। বিকাশে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রমাণ চাইলে তিনি পরে সরবরাহের আশ্বাস দেন।
এ বিষয়ে আরএমপি মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার গাজিউর রহমান বলেন, “এসআই মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তে একজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”

