কানাডার শীর্ষ তিন তামাক কোম্পানি—ফিলিপ মরিস, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো এবং জাপান টোব্যাকো—এবার ভুক্তভোগীদের সাথে বিশাল অংকের অর্থের বিনিময়ে সমঝোতার পথে হাঁটছে। এই উদ্যোগটি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা আইনি লড়াইয়ের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে, যেখানে তামাকের স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে জনসাধারণকে যথাযথ তথ্য না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া একটি ভোটাভুটির মাধ্যমে এই চুক্তির শর্তগুলো চূড়ান্ত হবে। আদালতের নিযুক্ত মধ্যস্থতাকারী প্রস্তাব দিয়েছেন, যার আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত ধূমপায়ী ও স্বাস্থ্য বিভাগের জন্য ৩ হাজার ২৫০ কোটি কানাডিয়ান ডলার (প্রায় ২ হাজার ৩৬০ কোটি মার্কিন ডলার) ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে কোম্পানিগুলো।
আইনি লড়াইয়ের পটভূমিতে ২০১৫ সালে কুইবেকের আদালতের একটি যুগান্তকারী রায় রয়েছে। আদালত তখন জানিয়েছিল যে, সিগারেট এবং ক্যান্সারের মধ্যে সম্পর্ক সম্পর্কে কোম্পানিগুলো সচেতন হলেও গ্রাহকদের সতর্ক করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই রায়কে ‘যুগান্তকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং কোম্পানিগুলো কানাডার দেউলিয়া আইনে সুরক্ষা পেয়ে যায়।

ফিলিপ মরিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যাসেক ওলক্যাক এই চুক্তি সম্পর্কে বলেন, “আমাদের এখনও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমাধান করা বাকি আছে। তবে আমরা আশাবাদী যে, আইনি প্রক্রিয়াটি শিগগিরই সম্পন্ন হবে।”
প্রস্তাবিত এই চুক্তির আওতায় ফুসফুস এবং গলার ক্যান্সারে আক্রান্ত ধূমপায়ী এবং তাদের উত্তরাধিকারীরা মোট ৬৫০ কোটি কানাডিয়ান ডলার ক্ষতিপূরণ পাবেন। কুইবেকের প্রাথমিক অভিযোগকারী ভুক্তভোগীরা পাবেন ৪০০ কোটি কানাডিয়ান ডলার, যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি অসুস্থতার প্রেক্ষিতে ১ লাখ কানাডিয়ান ডলার পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগও প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার তহবিল পাবে।
তবে এই চুক্তির প্রেক্ষিতে তামাক ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সংগঠনগুলোর মধ্যে কিছু উদ্বেগও রয়েছে। কুইবেক কাউন্সিলের মতে, এটি বিশ্বব্যাপী তামাক কোম্পানির বিরুদ্ধে কোনো প্রথম বড় ধরণের চুক্তি কিন্তু কিছু স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সংগঠন বলছে যে, এটি তামাক কোম্পানিগুলোর নতুন পণ্য প্রচার বন্ধের জন্য কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নয়।
ট্রুডেল জনস্টন অ্যান্ড এলস্পেরেন্স আইনি সংস্থার প্রতিনিধিরা আশাবাদী যে, অধিকাংশ ভুক্তভোগী এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেবেন। তবে তামাক নিয়ন্ত্রণের দিকে মনোযোগী সংগঠনগুলোর মতে, এই চুক্তি জনস্বাস্থ্য সমর্থনে তেমন কার্যকরী পদক্ষেপ হিসেবে প্রমাণিত হবে না।
অবশ্যই, এ ঘটনাটি কানাডার তামাক আইন ও কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে জনসাধারণের মনোভাবের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। তামাক নিয়ন্ত্রণের এই নতুন অধ্যায়টি আগামী মাসগুলোতে দেশটির স্বাস্থ্য ও আইনগত ব্যবস্থার ক্ষেত্রে নতুন এক সঙ্কট তৈরি করতে পারে।