রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর কাছে ঋণের প্রতিশ্রুতি ৯৯ শতাংশ কমেছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ঋণ ও অনুদান মিলিয়ে ২৮৮ কোটি ৫ লাখ ডলার প্রতিশ্রুতি এসেছিল। কিন্তু চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এই প্রতিশ্রুতির পরিমাণ নেমে এসেছে মাত্র ২ কোটি ৭৪ লাখ ডলারে। অর্থাৎ, এক বছরে প্রতিশ্রুতি কমেছে ২৮৫ কোটি ৩১ লাখ ডলার যা একটি উল্লেখযোগ্য সংকেত।
প্রতিবেদনটি আরও জানাচ্ছে, চলতি অর্থবছরে যে পরিমাণ ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে তার মধ্যে কোনো ঋণের পরিমাণ নেই, সমস্তই এসেছে অনুদান হিসেবে। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এই বছর ঋণের প্রতিশ্রুতি সম্পূর্ণভাবে অনুদানে পরিণত হয়েছে।
এছাড়া, ঋণের অর্থছাড়েও দেখা গেছে হ্রাস। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে অর্থছাড় হয়েছে ৮৪ কোটি ৬১ লাখ ২০ হাজার ডলার, যার মধ্যে ৬৬ কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার ডলার ছিল ঋণ এবং ১৮ কোটি ২৫ লাখ ডলার ছিল অনুদান। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ১২৮ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার ডলার।
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড় এবং প্রতিশ্রুতি কমলেও বেড়েছে ঋণ পরিশোধের চাপ। এই সময়ে ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ করা হয়েছে ১১২ কোটি ৬৫ লাখ ১০ হাজার ডলার। এর মধ্যে সুদ পরিশোধের পরিমাণ ৪৪ কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার ডলার এবং আসল পরিশোধ হয়েছে ৬৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ৮৭ কোটি ৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার, যা ২৫ কোটি ২৫ লাখ ডলার বেড়েছে।
টাকার অংকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ঋণ পরিশোধের জন্য খরচ করতে হয়েছে ১২ হাজার ৮৭৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে শোধ করতে হয়েছিল ৯ হাজার ৫৩৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৩ হাজার ৩৩৯ কোটি ২০ লাখ টাকা।
হালনাগাদ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে জাতিসংঘ এবং ইউরোপ ছাড়া অন্য কোনো সংস্থা বা দেশ ঋণের প্রতিশ্রুতি দেয়নি। তবে ঋণের প্রতিশ্রুতি না দিলেও বেশিরভাগ উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা অর্থছাড় করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে আমেরিকা, জাপান এবং ইউরোপ। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ ছাড়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে।
এই পরিস্থিতি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি উদ্বেগজনক বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি হ্রাস পাওয়ায় সরকার ও অর্থনীতির জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।