আগামী ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় ‘পাওয়ার ট্রান্সমিশন স্ট্রেংদেনিং অ্যান্ড ইন্টিগ্রেশন অব রিনিউয়েবল এনার্জি’ শীর্ষক প্রকল্পের বিষয়ে একটি আলোচনার পরিকল্পনা রয়েছে। এডিবির (এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক) ঋণে পরিচালিত এই প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারিত হয়েছে চার হাজার চার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় হবে ১০ কোটি ২২ লাখ টাকা, এডিবির ঋণ থেকে ২ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ হবে ৬ কোটি ২১ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির সঞ্চালন অবকাঠামোর শক্তিশালীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, প্রকল্পের ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রকল্পের চারটি খাতের জন্য প্রস্তাবিত ভাতার পরিমাণ মোট ৩১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে দৈনিক ভাতা বাবদ ১৬ কোটি ৬০ লাখ, অন্যান্য ভাতা বাবদ ১৩ কোটি ৪৩ লাখ, টিফিন ভাতা ৭৫ লাখ এবং আপ্যায়ন খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬ লাখ টাকা। এই বিশাল পরিমাণ অর্থের প্রস্তাবকে যৌক্তিক কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। পিইসি সভায় প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের কাছে এসব ব্যয়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।
সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ জানিয়েছেন, এ ধরনের প্রকল্পে সাধারণত নিয়োগপ্রাপ্তদের মাসিক বেতন বেশি ধরা হয়, ফলে তাদের ভাতার পরিমাণও বেশি হয়। তবে, প্রকল্পে ভাতার অঙ্কটি অস্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে। তার মতে, ভাতার ক্ষেত্রে অপচয় এবং অন্যান্য ব্যয়ের যৌক্তিকতা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এছাড়া, প্রকল্প প্রস্তাবে উল্লেখিত ল্যান্ড স্কেপিং ও অন্যান্য নির্মাণ কাজের ব্যয় অনেক বেশি হওয়ায় এ নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। এতে করে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয়ের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হতে পারে।
প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির পক্ষ থেকে আরও জানা যায়, প্রকল্পে ৪০০ কেভি এবং ২৩০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইনের জন্য ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে ক্ষতিপূরণ ধরা হয়েছে, তা যথাক্রমে ১২ লাখ ৪৪ হাজার এবং এক কোটি ১১ লাখ ৮১ হাজার টাকা প্রতি কিলোমিটার হিসাবে নির্ধারিত হয়েছে। এছাড়া মূল্য সংযোজন কর বাবদ ১১৮ কোটি, ল্যান্ড স্কেপিং খাতে ১১৮ কোটি ৬১ লাখ, অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ ব্যয় ২ কোটি ৭০ লাখ এবং ভিডিও নির্মাণ বাবদ ২০ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়েও সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।
এই প্রকল্পে আরও রয়েছে ৪০০ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণ, দুটি ২৩০ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণ এবং সাতটি ১৩২ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব। পাশাপাশি ১৩.৫ কিলোমিটার ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন, ৭.২০ কিলোমিটার ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন এবং ২১৭.৬০ কিলোমিটার ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ বা পুনর্গঠন করা হবে।
প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য দক্ষিণাঞ্চলের নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য সঞ্চালন অবকাঠামো নিশ্চিত করা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি ল্যাবরেটরির এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, চট্টগ্রাম বিভাগের দক্ষিণাঞ্চলে বিশেষ করে কক্সবাজারে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে কক্সবাজারসহ ১৪টি জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ প্রকল্পের কাজ ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২০২৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।