সরবরাহ বাড়াতে পেঁয়াজ ও চালের আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমানোর ঘোষণার পরও রাজধানীর খুচরা বাজারে দাম বাড়তে থাকায় ভোক্তাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বাজারে যথেষ্ট সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দাম বৃদ্ধি করতে চালাচ্ছেন নানা ধরনের কারসাজি। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজের দাম দশ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজের দাম সর্বোচ্চ বিশ টাকা বেড়ে গেছে।
শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার ও অন্যান্য খুচরা বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে চালের দামও বস্তাপ্রতি একশ থেকে দেড়শ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ভোক্তাদের প্রতি সপ্তাহে বাড়তি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে অন্তর্বর্তী সরকার পেঁয়াজের ওপর থেকে ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে। ভারত থেকে পেঁয়াজের রপ্তানি শুরু হলে বাজারে সরবরাহ কিছুটা বাড়বে বলে আশা করা হয়েছিল। তবে, বর্তমানে দেশি পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হতে চলেছে এবং বাজারে আসতে শুরু করা নতুন পেঁয়াজের সরবরাহও যথেষ্ট নয়। এর ফলে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর অজুহাত দিচ্ছেন। শুক্রবার খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম ১২০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে ছিল, যা সাতদিন আগে ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।
এদিকে, ১৬ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চাল আমদানিতে শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেয়। এনবিআর-এর তথ্যানুযায়ী, আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান তিন ধরনের শুল্ক কমিয়ে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ এবং নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। তবুও, বাজারে এই শুল্ক কমানোর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। বরং চালের দাম বেড়ে বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় পৌঁছেছে এবং কেজি প্রতি দাম বেড়ে ২-৩ টাকা হয়েছে।
কাওরান বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. সালাউদ্দিন বলেন, “প্রতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে পেঁয়াজের দাম নিয়ে কারসাজি চলে আসে। এ বছরও তেমন চিত্র দেখা যাচ্ছে। কেজি ১৩৫ টাকায় পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে।” অন্যদিকে, চালের দাম বৃদ্ধিও অগ্রহণযোগ্য বলে তিনি মন্তব্য করেন।
শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী শংকর চন্দ্র ঘোষ জানান, এই সময় দেশি পেঁয়াজের মজুত শেষ হতে চলে। নতুন পেঁয়াজ ওঠা শুরু হলেই দাম কমে যাবে বলে আশা করছেন তিনি। তবে এ বছর বন্যার কারণে কিছু পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাজারে সরবরাহের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
এদিকে, খুচরা বাজারে ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। বর্তমানে প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগের তুলনায় ১০-১৫ টাকা কম। ব্রয়লার মুরগির দামও ১৮৫ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে রয়েছে, যা সাতদিন আগে ১৯০-২১০ টাকায় ছিল।
সবজির দাম কিছুটা কমলেও এখনও তা উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। গোল বেগুনের দাম প্রতি কেজিতে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা, করলার দাম ১০০ টাকা এবং অন্যান্য সবজি যেমন পটোল, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, ঢ্যাঁড়শ ও ধুন্দল ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শসার দাম ৬০-৭০ টাকা, পেঁপের দাম ৪০-৫০ টাকা এবং কচুর মুখির দাম ৭০-৮০ টাকায় রয়েছে। কাঁচা মরিচ প্রতি কেজিতে ২০০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আর আলু ৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
এভাবে সরকারী শুল্ক কমানোর পদক্ষেপ সত্ত্বেও বাজারে দাম বাড়ানোর প্রবণতা ক্রেতাদের জন্য নতুন উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এ অবস্থায় ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের সময় এসেছে।