জীবন বীমা করপোরেশন সম্প্রতি তাদের পেনশন বিমা পরিকল্পনার নতুন নাম দিয়েছে ‘মেয়াদি সুবিধাযুক্ত পেনশন বিমা’। আগে এটি ‘বঙ্গবন্ধু সর্বজনীন পেনশন বিমা’ নামে পরিচিত ছিল। দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় জীবন বিমা প্রতিষ্ঠানটি এই পরিকল্পনা চালু করেছে দেশের ব্যবসায়ী, প্রবাসী ও সাধারণ মানুষের আর্থিক সুরক্ষার জন্য। উদ্দেশ্য-অবসরকালীন জীবনকে সুরক্ষিত ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তোলা।
পেনশন বিমা বলতে সাধারণত বুঝি মাসিক ভিত্তিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থপ্রাপ্তি, যা অবসরকালীন জীবনের একটি স্থিতিশীল আয়ের পথ। এই নতুন পরিকল্পনাটি তাদের জন্যই, যারা কর্মজীবন শেষে মাসিক পেনশন পেতে চান। আবার চাইলে মেয়াদ শেষে গ্রাহকরা এককালীন সম্পূর্ণ অর্থ বা ৫০ শতাংশও তুলে নিতে পারেন। বাকি ৫০ শতাংশ মাসিক পেনশন হিসেবে নিতে পারবেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, গ্রাহকরা আগের মতোই এই বিমার সকল সুবিধা পাবেন, যদিও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের জেরে পলিসিটির নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। জীবন বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মুহিবুজ্জামানও জানিয়েছেন, নাম বদলালেও গ্রাহকের জন্য সুযোগ-সুবিধা আগের মতোই বহাল আছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে প্রায় ১৭ কোটি মানুষ বাস করে। এর মধ্যে ২০ থেকে ৬৫ বছর বয়সী মানুষ প্রায় ১১ কোটি। এদের মধ্যে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বিষয়টি মাথায় রেখে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিকে স্মরণীয় করতে জীবন বীমা করপোরেশন চালু করেছিল ‘বঙ্গবন্ধু সর্বজনীন পেনশন বিমা’। বর্তমান নামের আওতায়ও সেই উদ্দেশ্য অটুট রাখা হয়েছে।
পলিসির মূল কাঠামো ও সুবিধাসমূহ-
২০ থেকে ৬০ বছর বয়সী যেকোনো ব্যক্তি এই বিমা পলিসিটি গ্রহণ করতে পারবেন। পলিসি গ্রহণকারীরা ষাণ্মাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে পারবেন। মেয়াদ সর্বনিম্ন ৫ বছর থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৬৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে। বিমার প্রাথমিক অর্থের পরিমাণ ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকা, তবে এর সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারিত নয়; গ্রাহকের সামর্থ্য অনুযায়ী নির্ধারণ করা যাবে।
বিমার মেয়াদ শেষে গ্রাহক চাইলে ১০, ১৫ বা ২০ বছরের জন্য মাসিক পেনশন নিতে পারবেন। বিমা কার্যক্রম চলাকালে গ্রাহকের মৃত্যু হলে, তাঁর নমিনি বোনাসসহ বিমা অঙ্কের সম্পূর্ণ অর্থ পাবেন। পেনশন চালু অবস্থায় বিমা গ্রাহকের মৃত্যু হলে, নমিনি অবশিষ্ট মেয়াদে পেনশন পাবেন।
আয়কর ছাড় ও সম্পূর্ণ করমুক্ত সুবিধা-
পেনশন পলিসিটির আরেকটি বড় সুবিধা হলো-মৃত্যুর পর বিমার দাবিকৃত অর্থ করমুক্ত। এছাড়া প্রিমিয়ামের ওপরেও আয়করের রেয়াত পাওয়া যাবে, যা গ্রাহকদের জন্য আর্থিকভাবে বাড়তি লাভজনক।
এই বিমা পরিকল্পনার আওতায় বিমা চলাকালীন গ্রাহকের মৃত্যু হলে, নমিনি সম্পূর্ণ বিমা অঙ্ক ও অর্জিত বোনাস পাবেন। মেয়াদ শেষে গ্রাহক চাইলে এককালীন ১০০ শতাংশ অর্থ উত্তোলন করতে পারেন। বিকল্পভাবে, ৫০ শতাংশ উত্তোলনের পর বাকি অর্থ মাসিক পেনশন হিসেবে গ্রহণ করতে পারবেন। এই সুবিধাগুলো বিমাকে করে তুলেছে আরও আকর্ষণীয় এবং সুবিধাজনক।
জীবন বীমা করপোরেশন একটি উদাহরণ দিয়ে পলিসিটির সুবিধাগুলো বোঝাতে চেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ৩৫ বছর বয়সী একজন গ্রাহক যদি ১০ লাখ টাকার বিমা নিয়ে ৫৫ বছর বয়সে পেনশন শুরু করতে চান, তবে তাকে প্রতি হাজারে ৪৯ দশমিক ৬৫ টাকা হারে প্রিমিয়াম দিতে হবে, যা বার্ষিক প্রায় ৪৯ হাজার ৬৫০ টাকা। ৫৫ বছরে তাঁর মোট জমা হবে ৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। জীবন বীমা করপোরেশনের নির্ধারিত বোনাস হারে এ বিমার মোট প্রাপ্তি দাঁড়াবে প্রায় ২০ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
এই ধরনের পেনশন বিমা পরিকল্পনাগুলি সঞ্চয়ের প্রবণতা তৈরি করে এবং কর্মজীবন শেষে আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জীবন বীমা করপোরেশনের নতুন নামকরণের এ উদ্যোগ এবং নতুন কৌশল ভবিষ্যৎ গ্রাহকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।