বাংলাদেশের কৃষি খাতে চলতি বছর বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে এসেছে। বিশেষ করে দেশের পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধান উৎপাদন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসেবে দেখা গেছে, এবার বন্যায় প্রায় ১১ লাখ মেট্রিক টন ধান নষ্ট হয়েছে। এই অবস্থায় দেশের খাদ্য সংকট মোকাবিলায় গম ও চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সরকার ইতিমধ্যেই গম আমদানির জন্য নতুন একটি দরপত্র আহ্বান করেছে। এই দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম কেনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। গমের এই চালান চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে খালাস করা হবে, যার মধ্যে ৩০ হাজার টন চট্টগ্রামে এবং ২০ হাজার টন মোংলায় পৌঁছাবে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ নভেম্বর।
মূলত ইউরোপীয় ব্যবসায়ীরা এই দরপত্রে অংশগ্রহণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারের খাদ্য অধিদপ্তর গম আমদানির এই প্রক্রিয়া তদারকি করছে। এছাড়া খাদ্য সংকট সামাল দিতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে যৌথ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এই গমের চালান চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে খালাস করা হবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের খাদ্য মজুদ পরিস্থিতি শক্তিশালী করতে চায় সরকার। এর আগেও গম আমদানির একটি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। যার মেয়াদ ছিল ৭ নভেম্বর পর্যন্ত, তবে সেই প্রক্রিয়া থেকে গম আমদানি হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত নয়।
নতুন এই দরপত্রের মাধ্যমে গম আমদানির কাজ নভেম্বরের শেষে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। সরকার দ্রুততার সাথে খাদ্য মজুদে জোর দিচ্ছে, বিশেষ করে বছরের বাকি সময়ে খাদ্য সংকট মোকাবিলার জন্য সময় মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আগ্রহী।
সরকারের পক্ষ থেকে শুধু গম নয়, চাল আমদানিরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি প্রক্রিয়া অনুমোদন পেয়েছে এবং শিগগিরই বেসরকারি খাতকে এই চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। অন্যদিকে রাশিয়ার সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে বাংলাদেশ দেশটি থেকে প্রায় ২৭ লাখ টন গম আমদানি করেছে। যা বাংলাদেশকে রাশিয়ার তৃতীয় বৃহৎ গম আমদানিকারক হিসেবে দাঁড় করিয়েছে।
দেশে অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদন বিপর্যস্ত হওয়ার পর, আমদানির ওপর নির্ভরতা বাড়ানো ছাড়া সরকারের হাতে অন্য বিকল্প নেই। গম ও চাল আমদানি প্রক্রিয়া চলমান রেখে সরকার দেশব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিজ্ঞ। তবে, এই নির্ভরতা দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতির উপর কেমন প্রভাব ফেলবে। তা নিয়ে এখনই ভাবা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।