বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়তে থাকায় স্বর্ণের বাজার নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর সম্ভাবনার কথা জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগান। প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি প্রকাশিত এক বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তিকে প্রতি আউন্স স্বর্ণের গড় দাম পৌঁছাতে পারে ৩ হাজার ৬৭৫ ডলারে যা ২০২৬ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৪ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন অর্থনীতি বর্তমানে মন্দার আশঙ্কায় রয়েছে এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধ ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এই ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী স্বর্ণের চাহিদা বাড়বে বলে মনে করছে জেপি মরগান। ব্যাংকটি জানিয়েছে, বর্তমান পূর্বাভাসের ভিত্তি হচ্ছে ২০২৪ সালের জুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিনিয়োগকারীদের সম্মিলিতভাবে শক্তিশালী স্বর্ণচাহিদা যা গড়ে প্রতি প্রান্তিকে ৭১০ টন পর্যন্ত হতে পারে।
স্বর্ণের বাজারে এই উর্ধ্বগতির ইঙ্গিত ইতোমধ্যেই প্রতিফলিত হচ্ছে। চলতি বছর এ পর্যন্ত স্বর্ণের দাম বেড়েছে ২৯ শতাংশ এবং নতুন রেকর্ড গড়েছে ২৮ বার। সর্বশেষ মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো স্বর্ণের দাম পৌঁছেছে ৩ হাজার ৫০০ ডলারে প্রতি আউন্স।
একই পথে হেঁটেছে আরেক বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস। তারা চলতি মাসের শুরুতে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ স্বর্ণের দাম পূর্বাভাস ৩ হাজার ৩০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে করেছে ৩ হাজার ৭০০ ডলার। ব্যাংকটি আরও বলেছে, যদি বিশ্বব্যবস্থায় চূড়ান্ত উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয় তবে স্বর্ণের দাম পৌঁছাতে পারে ৪ হাজার ৫০০ ডলারের কাছাকাছি।
তবে জেপি মরগান সতর্কতাও দিয়েছে এই পূর্বাভাস নিয়ে। তারা বলেছে, যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো হঠাৎ করে স্বর্ণ ক্রয় কমিয়ে দেয় তাহলে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হবে যদি মার্কিন অর্থনীতি শুল্কের চাপেও স্থিতিশীল থাকে এবং ফেডারেল রিজার্ভ মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কায় দ্রুত সুদের হার বাড়িয়ে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে বাজার আগেভাগেই সুদবৃদ্ধির ইঙ্গিত ধরে নিতে পারে যা স্বর্ণের দামে প্রভাব ফেলবে।
স্বর্ণের পাশাপাশি রূপার বাজারেও কিছু পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে জেপি মরগান। ব্যাংকটির মতে, স্বল্পমেয়াদে রূপার ওপর কিছু চাপ দেখা দিতে পারে কারণ শিল্প খাতে এর চাহিদা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে ২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে একটি ‘ক্যাচ-আপ উইন্ডো’ তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে যার ফলে বছরের শেষ নাগাদ রূপার দাম বেড়ে ৩৯ ডলার প্রতি আউন্সে পৌঁছাতে পারে।
বিশ্লেষণগুলো থেকে স্পষ্ট, বিশ্ব অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সোনার মতো মূল্যবান সম্পদের চাহিদা আরও বাড়বে। যদিও বাজারে উত্থান-পতনের ঝুঁকি থেকেই যায় তবুও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সিদ্ধান্ত আগামী বছরগুলোর দাম নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা রাখবে।