শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে কেবল বোনাস শেয়ার দেওয়ার সিদ্ধান্তের ফলে প্রায় ১০ কোটি টাকার অতিরিক্ত কর দিতে হচ্ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংককে। সম্প্রতি ব্যাংকটি ২০২৪ সালের অর্থবছরের জন্য ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে ব্যাংকটি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ সমাপ্ত অর্থবছরে ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩ টাকা ২২ পয়সা। একই সময়ে ব্যাংকটি ৩১৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা নিট মুনাফা অর্জন করেছে। এর মধ্যে থেকে ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার হিসাবে ৯৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনে যুক্ত করা হবে। বাকি ২১৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা, যা মুনাফার প্রায় ৬৯ শতাংশ রাখা হবে রিটেইনড আর্নিংসে।
তবে ব্যাংকের কেবল বোনাস শেয়ার প্রদানের এ সিদ্ধান্তের কারণে কর আইনের আওতায় অতিরিক্ত কর দিতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে নির্ধারিত নীতিমালার ভিত্তিতে বলা হয় কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানি যদি নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার দেয়, তবে সেই অতিরিক্ত বোনাস অংশের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে। সেই হিসেবে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংককে ৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকার কর পরিশোধ করতে হবে।
এ বিষয়ে ব্যাংকের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) সুজন বড়ুয়া ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, বর্তমানে ব্যাংকিং খাত মূলধননির্ভর হয়ে পড়েছে। ভালো মানের গ্রাহককেও ঋণ দিতে গেলে ‘এক্সপোজার লিমিট’-এর কারণে ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ দেওয়া সম্ভব হয় না। মূলধন ঘাটতির এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বোনাস শেয়ার দেওয়ার পথকেই বেছে নিয়েছে ব্যাংকটি।
তিনি আরও বলেন, বোনাস শেয়ার না দিলে বিকল্প হিসেবে আমাদের সাব-অর্ডিনেট বন্ড ইস্যু করতে হতো, যার খরচ এই করের তুলনায় অনেক বেশি পড়ত। যেহেতু এই কর সরকারের কোষাগারে যাচ্ছে এবং ব্যাংকের মূলধনও বাড়ছে তাই আমরা এটাকেই তুলনামূলকভাবে ভালো সিদ্ধান্ত বলে বিবেচনা করছি।
২০০৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন বর্তমানে ৯৮৩ কোটি ১২ লাখ টাকা। সর্বশেষ লেনদেনের তথ্যে দেখা গেছে, রোববার ব্যাংকটির শেয়ারদর কমে ১১ টাকা ১০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংকটির এই কর পরিশোধ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত ও মূলধন বাড়ানোর কৌশল ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক স্থিতিশীলতা ও সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।