ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছে, তা পরিশোধের চেয়ে বেশি। এর ফলে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের আগস্ট পর্যন্ত প্রথম দুই মাসে সরকারের ঋণ কমেছে দুই হাজার ৫১৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ব্যাংক থেকে নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য এক লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা। তবে আয় ব্যয়ের তুলনায় বেশি হওয়ায় আগের দায় শোধ করছে সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট শেষে সরকারের মোট ঋণ কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৪৪ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকায়। জুন শেষে যা ছিল ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা। অর্থাৎ দুই মাসে ঋণ কমেছে দুই হাজার ৫১৭ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংকে সরকারের নিট ঋণ প্রথম দুই মাসে বেড়েছে ৫৮৯ কোটি টাকা। আগস্ট শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকে ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকায়। একই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নতুন ঋণ নেওয়ার চেয়ে বেশি পরিশোধ হয়েছে তিন হাজার ১০৫ কোটি টাকা। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের ঋণ কমে ৮৮ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকায় নেমেছে।
গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ব্যাংক থেকে নিট ঋণ ছিল ৭২ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। এটি গত চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। একই সময়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৬ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা কম। মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিভিন্ন বিদেশি উৎস থেকে গত অর্থবছরের শেষ সময়ে বিপুল ঋণ পেয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর সরকারের ঋণ চাহিদা কমে গেছে। উন্নয়ন প্রকল্প ধীরগতি এবং ট্রেজারি বিল ও বন্ডে সুদের হারও কমে আসায় ঋণের চাপ কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, দেশের জিডিপি বৃদ্ধির চেয়ে এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। বাজারে তারল্য নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রধান নীতি সুদহার রেপো ১০ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আগস্টে মূল্যস্ফীতি কমে ৮.২৯ শতাংশে নেমেছে, যা গত ৩৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, বিনিময় হার স্থিতিশীল এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ভালো থাকায় মূল্যস্ফীতি কমছে। এটি আরও কমবে। মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে না নামা পর্যন্ত নীতি সুদহার পরিবর্তন করা হবে না।
ব্যাংকের বাইরে অভ্যন্তরীণ উৎসে, সঞ্চয়পত্রে জুলাইতে সরকারের ঋণ বেড়েছে এক হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে এটি কমেছিল ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে সরকারের ঋণ অবস্থান এখন তিন লাখ ৩৯ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা।

