চলতি করবর্ষে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক করা হয়েছে। যাদের ই-টিআইএন (অনলাইন ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) আছে, তাদের সবাইকে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
ই-রিটার্নের জন্য যা লাগবে
রিটার্ন জমা দিতে এনবিআর-এর (ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভেনিউ) ই-ট্যাক্স সিস্টেম ব্যবহার করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন হবে—
- বায়োমেট্রিক করা মোবাইল নম্বর
- ই-টিআইএন নম্বর
প্রথমে নিশ্চিত করতে হবে মোবাইল নম্বরটি জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সঙ্গে যুক্ত আছে কিনা। এজন্য *১৬০০১# ডায়াল করে এনআইডির শেষ চারটি সংখ্যা পাঠাতে হবে। এর পরপরই সংশ্লিষ্ট এনআইডির সঙ্গে যুক্ত মোবাইল নম্বরের তালিকা এসএমএসে পাঠানো হবে। তালিকা এলে বোঝা যাবে নম্বরগুলো বায়োমেট্রিক করা।
রিটার্ন জমা দিতে কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হয় না। তবে প্রতিটি তথ্য দিতে হবে নির্ভুলভাবে। কর অফিস থেকে যাচাইয়ের সময় যেন তা দেখানো যায়, সেজন্য নথিপত্র প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন।
কীভাবে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেবেন
১. প্রবেশ করুন এনবিআর-এর ওয়েবসাইটে https://etaxnbr.gov.bd/।
২. সেখানে ‘ই-রিটার্ন’ অপশনে গিয়ে নতুন হলে ‘আই অ্যাম নট ইয়েট রেজিস্টার্ড’ বাটনে ক্লিক করুন।
৩. সাইনআপ পেজে টিআইএন নম্বর, বায়োমেট্রিক করা মোবাইল নম্বর এবং ক্যাপচা পূরণ করে ‘ভেরিফাই’ ক্লিক করতে হবে।
৪. এরপর মোবাইলে ছয় অঙ্কের ওটিপি আসবে। সেটি বসিয়ে একটি নতুন আলফানিউমেরিক পাসওয়ার্ড (অক্ষর, সংখ্যা ও চিহ্নসহ) দিয়ে সাবমিট করলে অ্যাকাউন্ট তৈরি হবে।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো—ই-টিআইএন যেহেতু এনআইডি দিয়ে করা, তাই সিস্টেমে দেওয়া নাম ও বায়োমেট্রিক নম্বরের নাম অবশ্যই একই হতে হবে। অন্যের রিটার্ন নিজের নম্বর ব্যবহার করে দাখিল করা যাবে না।
অ্যাকাউন্ট তৈরি হলে টিআইএন নম্বর, পাসওয়ার্ড ও ক্যাপচা দিয়ে লগইন করতে হবে। এরপর দেখা যাবে ই-রিটার্ন ড্যাশবোর্ড।
রিটার্ন জমার ধরন
ড্যাশবোর্ডে ‘সাবমিশন’ মেনুতে আছে দুটি অপশন—
- সিঙ্গেল পেজ রিটার্ন
- রেগুলার রিটার্ন পেজ
সিঙ্গেল পেজ রিটার্ন কেবল তাদের জন্য, যারা ৭টি শর্ত পূরণ করেন। যেমন—
- বার্ষিক আয় ৫ লাখ টাকার নিচে
- মোট সম্পদ ৫০ লাখ টাকার কম
- সরকারি কর্মচারী নন
- মোটরগাড়ি নেই
- সিটি করপোরেশন এলাকায় বাড়ি নেই
- বিদেশে সম্পদ নেই
- কোনো কোম্পানির শেয়ার নেই
এ পেজে আয়ের উৎস, মোট আয়, ব্যয়, সম্পদ, কর ছাড়, উৎসে কর্তন ও প্রদেয় করসহ সব তথ্য দেওয়া যায়। চাইলে খসড়া রাখা যায়, আবার সঙ্গে সঙ্গেই সাবমিটও করা যায়।
আয়ের বিস্তারিত ও কর হিসাব
রিটার্নে থাকবে আয়ের ধরণ, করমুক্ত আয়ের তথ্য, বৈদেশিক আয়, বিনিয়োগ, বিমা, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের তথ্য।
সব তথ্য জমা দিলে সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে করের হিসাব করে দেবে। কোনো বকেয়া না থাকলে রিটার্ন হবে ‘শূন্য রিটার্ন’।
কর পরিশোধ
কর পরিশোধ করতে ড্যাশবোর্ডে ‘পে নাউ’ বাটনে ক্লিক করতে হবে। এরপর কার্ড, অনলাইন ব্যাংকিং বা মোবাইল ব্যাংকিং—যে কোনো মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে অর্থ প্রদান করা যাবে।
রিটার্ন সনদ সংগ্রহ
জমা দেওয়ার পরই রিটার্ন সনদ, কর পরিশোধের রশিদ এবং অন্যান্য রেকর্ড তৈরি হয়ে যাবে, যা সঙ্গে সঙ্গে ডাউনলোড করা যাবে।