ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে বিপাকে পড়েছে নিউ লাইন ক্লথিংস লিমিটেড। তালিকাভুক্ত এই পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। এ অবস্থায় ৪২৪ কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণ উদ্ধারে পদক্ষেপ নিয়েছে সাউথইস্ট ব্যাংক পিএলসি।
ব্যাংকটি গত ১৭ সেপ্টেম্বর এক নোটিশে জানায়, ঋণ খেলাপির কারণে কোম্পানির বন্ধক রাখা সম্পদ নিলামে তোলা হবে। ১৮ আগস্ট পর্যন্ত নিউ লাইন ক্লথিংসের বকেয়া ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪২৪ কোটি ১২ লাখ টাকা। নিলামে অংশ নিতে আগ্রহীদের জন্য আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ব্যাংক। নিলামে বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে গাজীপুরে ১১২ শতক জমি ও একটি সাততলা ফ্যাক্টরি ভবন।
কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জাকির চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। একজন সাবেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নিউ লাইন ক্লথিংস দীর্ঘদিন ধরেই তীব্র মূলধন সংকটে ছিল। তিনি বলেন, “ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় কোম্পানি বড় সংকটে পড়ে। কার্যক্রম চালানোর মতো অর্থ না থাকায় বহু বছর ধরে কারখানা বন্ধ।”
২০০৭ সাল থেকে সাউথইস্ট ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংকিং সম্পর্ক বজায় রাখছে প্রতিষ্ঠানটি। দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি উভয় ধরনের ঋণ নিয়েছে তারা। ২০১৯ সালে আইপিওর মাধ্যমে ৩০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এর একটি অংশ ব্যাংক ঋণ পরিশোধে এবং নতুন যন্ত্রপাতি কেনার কাজে ব্যয় করার কথা ছিল। তবে বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার সময়ই ব্যাংকের কাছে তাদের ঋণ ছিল ১২৩ কোটি টাকা। উল্লেখযোগ্য হলো, নিউ লাইন ক্লথিংসের আইপিও ব্যবস্থাপনায় ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটালও ছিল।
তবে শেয়ারবাজারে প্রবেশের পরই কোম্পানির আর্থিক অবস্থা অবনতির দিকে যেতে থাকে। ২০২২ সালের মার্চের পর থেকে আর কোনো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি তারা। ২০২০–২১ অর্থবছরের পর থেকে কোনো লভ্যাংশও ঘোষণা করা হয়নি। ওই বছর সর্বশেষ ১২.২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি, যখন মুনাফা হয়েছিল ১২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদনে ডিএসইর একটি পরিদর্শন দল কোম্পানির প্রধান কার্যালয় ও কারখানা পরিদর্শনে গেলে উভয় স্থানই বন্ধ দেখতে পায়।
একজন জ্যেষ্ঠ ডিএসই কর্মকর্তা জানান, বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে একাধিক অভিযোগ এসেছে যে কোম্পানি কার্যক্রম বন্ধ করলেও বাজারকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি। এছাড়া টানা তিন বছর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করায় নিয়ম লঙ্ঘন হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিউ লাইন ক্লথিংসকে ডিএসইর “Z” ক্যাটাগরিতে নামিয়ে আনা হয়।
শেয়ারবাজারেও কোম্পানির পতন স্পষ্ট। ২০২৪ সালের আগস্টে শেয়ারের দর ছিল ৪৫ টাকা ৪০ পয়সা। বৃহস্পতিবার শেষ লেনদেনে তা নেমে এসেছে মাত্র ৫ টাকা ৯০ পয়সায়, যা ১০ টাকার মূল মূল্যেরও নিচে। বর্তমানে এর বাজারমূল্য ৪৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, যেখানে পরিশোধিত মূলধন ৭৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
কোম্পানিটি সর্বশেষ শেয়ারহোল্ডিং তথ্য হালনাগাদ করেছে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। তখন উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে ছিল ৩০.৬১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৮.৩৩ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ছিল ৫১.০৬ শতাংশ শেয়ার। এরপর থেকে আর কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। তথ্য হালনাগাদ না হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, তাদের বিনিয়োগ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

