বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নতুন আমদানি নীতির খসড়া প্রণয়ন করেছে। এটি আগামী উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। খসড়ার ধারা-উপধারা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। বড় ধরনের সংশোধন না হলে ওই বৈঠকেই অনুমোদন দেওয়া হবে।
নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের আমদানি নীতি ব্যবসাবান্ধব। নীতি প্রণয়নের আগে ব্যবসায়ীদের মতামত নেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, চূড়ান্ত হলে ব্যবসায়ীরা স্বাগত জানাবেন। ব্যবসায়ীদের দাবি, তাদের মতামতের প্রতিফলন অবশ্যই থাকতে হবে।
বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান জানান, খসড়া নীতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। ব্যবসায়ীদের মতামত নেওয়া হয়েছে। নীতি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে সহায়ক হবে। তিনি আরও জানান, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধি অনুযায়ী এলসি খোলার সময় ন্যূনতম দর বা নগদ মার্জিনের নিয়ম বাতিল করা হয়েছে। এতে আমদানিকারকদের চাপ কমবে। আগে পণ্যের ধরনভেদে শতভাগ নগদ মার্জিন জমা দিতে হতো। এতে ডলার সংকটে ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী মোটরকার, ইলেকট্রনিক্স, স্বর্ণ, পোশাক, চামড়া, পাটজাত পণ্য, আসবাব, খাদ্য ও পানীয়সহ অনেক পণ্যে শতভাগ নগদ মার্জিন বাধ্যতামূলক ছিল। পরে জরুরি পণ্যে কিছু ছাড় দেওয়া হয়। তবে এবার খসড়ায় নগদ মার্জিন সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়েছে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, এলসি মার্জিন তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীরা স্বাগত জানাবেন। তবে কাস্টমস জটিলতা, নীতির ঘনঘন পরিবর্তন, বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিরতা ও উচ্চ শুল্ক বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। তাই দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল নীতি ও কাস্টমস সংস্কার জরুরি।
বাংলাদেশে প্রতি তিন বছর অন্তর আমদানি নীতি জারি হয়। সর্বশেষ ২০২১-২০২৪ অর্থবছরের জন্য নীতি কার্যকর ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর নতুন নীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়। অনুমোদনের পর এটি ২০২৫ সালের জুন থেকে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত কার্যকর হবে। খসড়া প্রণয়নের আগে ব্যবসায়ী সংগঠন ও চেম্বারের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, অতীতে মুষ্টিমেয় কয়েকজনের স্বার্থে নীতি করা হয়েছিল। এবারের নীতিতে ব্যবসায়ীদের মতামতের প্রতিফলন থাকবে বলে আশা করছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের প্রস্তাব খসড়ায় যুক্ত হয়েছে। আমদানি করা খাদ্য বিদেশি অনুমোদিত ল্যাবে পরীক্ষা করা হলে দেশে পুনরায় পরীক্ষা করতে হবে না। নীতির খসড়ায় বর্জ্য, চিংড়ি, শূকরজাত পণ্য, পোস্তদানা, পুরোনো কম্পিউটার, ফটোকপিয়ার, দুই স্ট্রোক ইঞ্জিন, হাইড্রোলিক হর্ন, ক্ষতিকর রাসায়নিক ও অশ্লীল বা নাশকতামূলক প্রকাশনা আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
শর্ত সাপেক্ষে আমদানি করা যাবে পাঁচ বছরের বেশি পুরোনো গাড়ি, তিন বছরের বেশি পুরোনো ১৬৫ সিসির ওপর মোটরসাইকেল, কারেন্ট জাল, এলএনজি, খেলনা, বেসামরিক বিমান ও হেলিকপ্টার। যুদ্ধজাহাজ বা অস্ত্র আমদানিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। এছাড়া, উপমহাদেশীয় ভাষার চলচ্চিত্র আমদানি করা যাবে না। শুধু যৌথ প্রযোজনার ছবি এর বাইরে থাকবে।