বেসরকারি খাতে নতুন বিনিয়োগ না বাড়ায় এবং ঋণের চাহিদা কমে যাওয়ায় ব্যাংক খাতে অলস টাকার পরিমাণ দ্রুত বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৫ সালের জুন শেষে দেশের ৬১টি তফসিলি ব্যাংকে উদ্বৃত্ত টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা।
এই সময়ে ব্যাংক খাতে মোট তারল্যের প্রয়োজন ছিল ৩ লাখ ২ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা কিন্তু বাস্তবে তা দাঁড়ায় ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় তারল্য অনেক বেশি বেড়ে গেছে। ২০২৪ সালের জুন শেষে ব্যাংক খাতে মোট তারল্য ছিল ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা। ওই সময় প্রয়োজন ছিল ২ লাখ ৮০ হাজার ৭৩৯ কোটি। উদ্বৃত্ত ছিল ১ লাখ ৯২ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে উদ্বৃত্ত বেড়েছে প্রায় ৯১ হাজার কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর বিনিয়োগের পরিবেশ স্বাভাবিক হয়নি। ফলে ঋণ নেওয়া কমে গেছে, আর তার প্রভাব পড়েছে ব্যাংক খাতে। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ খুবই কম। এ কারণেই ব্যাংকের হাতে অতিরিক্ত টাকা জমে আছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন জানান, ব্যাংকে আমানত কিছুটা বেড়েছে, তবে তারল্য বেড়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। মূলত করপোরেট ঋণের চাহিদা কমে গেছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কিনে বাজারে টাকার সরবরাহ বাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে তারল্য উদ্বৃত্ত হয়েছে।
২০২৫ সালের জুন শেষে ৬টি সরকারি ব্যাংকের মোট তারল্য দাঁড়ায় ১ লাখ ৮৩ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা। তাদের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৭৯ হাজার ৯৮৩ কোটি। ফলে উদ্বৃত্ত দাঁড়ায় ১ লাখ ৩ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জুনে এই ব্যাংকগুলোর তারল্য ছিল ১ লাখ ৪৪ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। এক বছরে বেড়েছে ৩৯ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের এমডি মো. মজিবর রহমান বলেন, নতুন বিনিয়োগ না থাকায় তারা মূলত সরকারি সিকিউরিটিজে টাকা রাখছে। তারপরও উদ্বৃত্ত কমছে না।
শরিয়াহভিত্তিক নয় এমন ৩৪টি বেসরকারি ব্যাংকের তারল্য ২০২৫ সালের জুন শেষে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। প্রয়োজন ছিল মাত্র ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬৩২ কোটি। উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। এক বছরে এই খাতে তারল্য বেড়েছে ৭৮ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে শরিয়াহভিত্তিক ১০টি ইসলামি ব্যাংকের তারল্য দাঁড়ায় ৪০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। প্রয়োজন ছিল ৩৭ হাজার ৯৮৩ কোটি। উদ্বৃত্ত হয়েছে ২ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা। তবে ২০২৪ সালের জুনে তাদের তারল্য ছিল ৪৬ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে কমেছে ৬ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা।
২০২৫ সালের জুনে ৯টি বিদেশি ব্যাংকের তারল্য দাঁড়ায় ৪৭ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। তাদের প্রয়োজন ছিল ১৫ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা। এক বছরে উদ্বৃত্ত বেড়েছে ১ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা। দুটি বিশেষায়িত ব্যাংকের ক্ষেত্রে তারল্য দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। তাদের প্রয়োজন ছিল ২ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জুনে ছিল ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। এক বছরে বেড়েছে ২৬৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। ডলার কেনার ফলে ব্যাংকগুলোয় নগদ টাকার পরিমাণ বেড়েছে। কিন্তু ঋণের চাহিদা না থাকায় অলস টাকার পরিমাণ আরও বেড়ে গেছে।

