চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) দেশের নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে এ খাতের ২০টি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের হার ৫০ থেকে ৯৯ শতাংশের মধ্যে।
এসব প্রতিষ্ঠানের অনেক গ্রাহক আমানত ফেরত পাচ্ছেন না। নতুন ঋণ বিতরণও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। কার্যত দেউলিয়া অবস্থায় পড়ে আছে তারা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, খেলাপি ঋণ ও দায় পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় গত মাসে ২০টি প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দেওয়া হয়। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়—এ অবস্থায় কেন প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করা হবে না। এর মধ্যে ৯টি প্রতিষ্ঠান কোনো সন্তোষজনক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা দিতে না পারায় সেগুলো বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারের পক্ষ থেকেও এ সিদ্ধান্তে সম্মতি এসেছে।
বন্ধের ঝুঁকিতে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—এফএএস ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, আভিভা ফাইন্যান্স, প্রিমিয়ার লিজিং, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স ও প্রাইম ফাইন্যান্স। এসব প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের হার ৮০ থেকে ৯৯ শতাংশে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক ও সহকারী মুখপাত্র মো. শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য এগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি এখনো পর্যালোচনা পর্যায়ে আছে। সরকার থেকে অর্থ সহায়তা মিললেই প্রক্রিয়া শুরু হবে। সবকিছু হবে আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষার ভিত্তিতে।
এ ছাড়া আরও অন্তত ১৩টি প্রতিষ্ঠান ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—সিভিসি ফাইন্যান্স, বে লিজিং, ইসলামিক ফাইন্যান্স, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স, হজ ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, আইআইডিএফসি, উত্তরা ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ইউনিয়ন ক্যাপিটালসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। এদের খেলাপি ঋণের হার ৫০ শতাংশের ওপরে।
সর্বশেষ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এনবিএফআই খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ২৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। যা বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৩৬ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এত বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ এনবিএফআই খাতকে অচল অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

