মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যযুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তিনি আমদানি করা ওষুধ, ট্রাক, ঘর সাজানোর সামগ্রী ও আসবাবপত্রে নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। আগামী ১ অক্টোবর থেকে এই নীতি কার্যকর হবে।
ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ লিখেছেন, “আমরা আমদানি করা যেকোনো ব্র্যান্ডেড বা পেটেন্ট করা ওষুধের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করব, যদি না সেই কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে নিজস্ব কারখানা তৈরি করে।” তিনি আরও ঘোষণা দেন, বিশ্বের অন্য দেশে তৈরি সব ভারী ট্রাকের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এতে পিটারবিল্ট, কেনওয়ার্থ, ফ্রেইটলাইনার, ম্যাক ট্রাকসসহ স্থানীয় উৎপাদকরা লাভবান হবে। তবে এই সিদ্ধান্তের প্রভাবে সুইডেনের ভলভো ও জার্মানির ডাইমলার কোম্পানির শেয়ারদর ইউরোপের বাজারে হঠাৎ কমে যায়।
ট্রাম্পের দাবি, জাতীয় নিরাপত্তার কারণেই ট্রাক আমদানিতে এই কড়াকড়ি আনা হয়েছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে তার প্রশাসন ২৩২ ধারা ব্যবহার করে আমদানি করা ট্রাকের ওপর জাতীয় নিরাপত্তা তদন্ত শুরু করে। এই আইনের অধীনে প্রেসিডেন্ট আমদানিকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করলে শুল্ক আরোপ করতে পারেন।
শুধু ওষুধ ও ট্রাক নয়, ট্রাম্প ঘর সাজানোর পণ্যেও বড় অঙ্কের শুল্ক ঘোষণা করেছেন। ১ অক্টোবর থেকে রান্নাঘরের ক্যাবিনেট, বাথরুম ভ্যানিটি ও সংশ্লিষ্ট সব পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ এবং আসবাবপত্রের গদি জাতীয় জিনিসপত্রের ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে।
যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া আসবাবপত্রের ৬০ শতাংশই আমদানিকৃত। এর মধ্যে ৮৬ শতাংশ কাঠের আসবাবপত্র এবং ৪২ শতাংশ গদি জাতীয় আসবাব এশিয়া থেকে এসেছে। ফলে এই সিদ্ধান্তে বাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ওয়েফেয়ার ও উইলিয়ামস সোনোমার মতো খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদরও ধসে পড়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই নতুন শুল্কনীতি আবারও মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তবে তিনি মনে করছেন, সুরক্ষামূলক এই নীতিই যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতকে পুনর্গঠনে সহায়ক হবে।
এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন সব দেশের আমদানির ওপর প্রাথমিকভাবে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। পাশাপাশি কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের মতো বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোতেও অতিরিক্ত শুল্ক বসানো হয়। চীনের ক্ষেত্রে ফেন্টানিল পাচার ও অবৈধ অভিবাসনের কারণ দেখানো হয়। তবে নতুন শুল্ক ব্যবস্থা আগের সিদ্ধান্তগুলোর সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।