দেশে ডিজিটাল ব্যাংকিং খাতের ভালো সম্ভাবনা থাকলেও তা পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। কারণ হিসেবে নীতিসহায়তার অভাব, ব্যবহারকারীদের আস্থাহীনতা, দুর্বল অবকাঠামো, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সমন্বয়হীনতা এবং ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির উচ্চমূল্যের কথা তুলে ধরেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) আয়োজনে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলে ‘সবার জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিং: আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ব্যবধান দূরীকরণ’ শীর্ষক ফোকাস গ্রুপ আলোচনায় এসব মত উঠে আসে।
স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, দেশে ২০১১ সালে মোবাইল আর্থিক সেবা চালু হলেও এখনো প্রায় ৪৬ শতাংশ মানুষ এ সেবার বাইরে। বর্তমানে মাত্র ৫৪ শতাংশ মানুষ এমএফএস ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, এই খাতকে বিস্তৃত করতে হলে সেবার খরচ কমাতে হবে, জনগণের আর্থিক ও ডিজিটাল দক্ষতা বাড়াতে হবে এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয় জোরদার করতে হবে।
প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী জানান, সঠিক ডেটা নিবন্ধনের অভাবে ৫ কোটি নাগরিকের তথ্য ডার্ক ওয়েবে চলে গেছে। তাই ডেটা এনক্রিপশন এবং নজরদারি জোরদার করা জরুরি। তিনি বলেন, সরকার ব্যক্তিগত ডেটা সংরক্ষণ অর্ডিনেন্স করার উদ্যোগ নিয়েছে, যা এক মাসের মধ্যেই সম্পন্ন হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. এজাজুল ইসলাম বলেন, ডেবিট, ক্রেডিট, ডিপোজিট ও বিমাসহ বিভিন্ন আর্থিক সেবায় বাংলাদেশ এগোলেও এখনো অনেক মানুষ প্রথাগত ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। তিনি জানান, বর্তমানে মাত্র ২৭-২৮ শতাংশ লেনদেন ডিজিটাল মাধ্যমে হয়, বাকি ৭০ শতাংশের বেশি লেনদেন প্রচলিত ব্যবস্থায় হয়ে থাকে। রবি আজিয়াটার হেড অব কমার্শিয়াল পার্টনারশিপ সানজিদ হাসান বলেন, ডিজিটাল ব্যাংকিং খাতকে ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার সুযোগ রয়েছে। তবে এজন্য সাইবার নিরাপত্তায় একটি সমন্বিত ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে, নইলে বড় ঝুঁকির আশঙ্কা থাকবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. ইলিয়াস জিকো বলেন, প্রতিদিন প্রায় ১০-২০ কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতবদল হচ্ছে। এ কারণে গ্রাহকের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এমএফএস অ্যাকাউন্ট খোলার পর নবায়ন প্রক্রিয়া চালুর বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান বলেন, আর্থিক খাতে ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণেই খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এজন্য অনিয়ম মোকাবিলায় বিচার ব্যবস্থায় সংস্কার প্রয়োজন।
সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী আজিজুর রহমান বলেন, দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় বাধা হলো প্রয়োজনীয় নীতিসহায়তার অভাব। পাশাপাশি প্রথাগত ব্যাংকগুলোর কোনো সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না থাকাও ডিজিটাল ব্যাংকিং বিকাশে বাধা তৈরি করছে। ওমেগা এক্সিমের পরিচালক রেজওয়ান আলী বলেন, দেশের আমদানি-রপ্তানির বেশিরভাগ কার্যক্রম এখনো প্রথাগত পদ্ধতিতে চলছে। এটিকে ডিজিটাল ব্যবস্থায় রূপান্তর কঠিন নয়, তবে সরকারের সহযোগিতা দরকার।
বেটলস্ সাইবার সিকিউরিটির প্রধান সাইবার কর্মকর্তা শাহী মির্জা বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ব্যবহৃত কম্পিউটার ও অন্যান্য প্রযুক্তি সুরক্ষিত করতে হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মিত প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। অনুষ্ঠানে ডিসিসিআইয়ের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহসভাপতি মো. সালিম সোলায়মানসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

