বাংলাদেশের কলমানি বাজারে নগদ লেনদেন বেড়েছে। দীর্ঘদিনের স্থবির আন্তঃব্যাংক লেনদেন আবারও সক্রিয় হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক নীতি পরিবর্তন সরকারি গ্যারান্টিযুক্ত স্থায়ী আমানত সুবিধা হারে ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমানো এই পুনরুজ্জীবনে বড় ভূমিকা রাখছে বলে জানা গেছে।
একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে মার্কিন ডলার কিনছে। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে স্থানীয় মুদ্রা সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে অর্থবাজারে তারল্য প্রবাহ বেড়েছে। এই নগদ প্রবাহে উৎসাহিত হয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক তাৎক্ষণিক লেনদেন বাজারে (স্পট মার্কেট) বিনিয়োগ করছে। অর্থনীতিতে চলমান মন্দার মধ্যেও এ লেনদেন বাড়ছে।
কলমানি বাজার হলো ব্যাংকগুলোর পারস্পরিক ঋণ ও আমানতের প্ল্যাটফর্ম। এখান থেকে তারা সম্পদ-দায় সামঞ্জস্য করে, বাধ্যতামূলক নগদ সংরক্ষণ অনুপাত ও তারল্য সংরক্ষণ অনুপাত পূরণ করে এবং হঠাৎ তহবিল সংকট মেটায়। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বাজার সচল রাখতে নানা নীতি পদক্ষেপ নিচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুনে ব্যাংকগুলোর মধ্যে কলমানি বা তাৎক্ষণিক লেনদেন বাজারে লেনদেন হয়েছে ৮৮৮ হাজার কোটি টাকা। একই মাসে ব্যাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত তহবিল থেকে ৭২৭ হাজার কোটি টাকা কম-সুদে স্থায়ী আমানত সুবিধায় রেখেছে। তবে জুলাইয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি পরিবর্তন আনে। SDF হার কমিয়ে ৮ শতাংশ করা হয়, যা আগে ছিল ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এর ফলে ব্যাংকগুলো স্থায়ী আমানত সুবিধার অর্থ জমাতে নিরুৎসাহিত হয়, কারণ কলমানির সুদের হার প্রায় ১০ শতাংশ।
এরপর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। ব্যাংকগুলো স্থায়ী আমানত সুবিধার ব্যবহার কমায় এবং কলমানি বাজারে নগদ লেনদেন বাড়ে। জুলাই ও আগস্টে আন্তঃব্যাংক তাৎক্ষণিক লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় মাসে ১ দশমিক ১৬ ট্রিলিয়ন টাকা। একই সময়ে SDF ব্যবহার হয় যথাক্রমে ২৬১ হাজার কোটি ও ২৬৭ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (গ্রেড-১) ড. মো. এযাজুল ইসলাম বলেন, “মুদ্রানীতি আধুনিকায়ন ও তারল্য ব্যবস্থাপনায় আমরা নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। কলমানি বাজার এখন তার ফল দেখাচ্ছে।” তিনি জানান, স্থায়ী আমানত সুবিধার হার কমানোর মূল লক্ষ্য হলো ব্যাংকগুলোকে উদ্বৃত্ত তহবিল জমা না রেখে কলমানিতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কিনছে, যাতে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল থাকে। এতে ব্যাংকগুলো তারল্য চাপে পড়লে ডলার বিক্রি করে সমস্যার সমাধান পাচ্ছে। ড. ইসলাম বলেন, “বর্তমানে বিনিয়োগ প্রবাহ কম। ব্যাংকগুলো কলমানিতে বেশি বিনিয়োগ করছে, যা আমাদের লক্ষ্য।”
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, “সাম্প্রতিক সময়ে ডলার বিক্রি বাড়ায় ব্যাংকগুলোর তারল্য পরিস্থিতি উন্নত হচ্ছে। স্থায়ী আমানত সুবিধা থেকে লাভ কমায় নির্দিষ্ট কিছু ব্যাংকের নির্ভরযোগ্য তারল্য সহায়তা ব্যবহারের প্রবণতাও কমছে।” তিনি আরও বলেন, “এসব কারণে কলমানি বাজারে লেনদেন বাড়ছে। আমি মনে করি, বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী দিনগুলোতেও আরও ডলার কিনবে যতদিন না অর্থনৈতিক কার্যক্রম পূর্ণমাত্রায় শুরু হয়।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৩ জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত তারা ১ হাজার ৮৭৭ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। এর বিপরীতে প্রায় ২২৮ মিলিয়ন টাকা ব্যাংকগুলোকে সরবরাহ করেছে। যা চলমান নিম্ন বিনিয়োগ পরিবেশে ব্যাংক খাতে তারল্য উন্নত করতে বড় ভূমিকা রাখছে।