দেশের জুতা প্রস্তুত ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের মুনাফা এক বছরের ব্যবধানে ৪ কোটি ৯ লাখ টাকা বা ২৩ শতাংশ কমে গেছে। গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানির মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকায়। এর আগের অর্থবছরে মুনাফা ছিল ১৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। গত বৃহস্পতিবার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ সভায় গত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়, যেখানে মুনাফা কমে যাওয়ার তথ্য উঠে আসে।
মুনাফা কমলেও লভ্যাংশ বাড়ানো হয়েছে। কোম্পানি গত অর্থবছরের জন্য নগদ ও বোনাস মিলিয়ে শেয়ারধারীদের ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ নগদ এবং ২৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ। গত বৃহস্পতিবারের পর্ষদ সভায় আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে লভ্যাংশের এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২০১৮–১৯ অর্থবছরের পর এবারই কোম্পানি শেয়ারধারীদের সর্বোচ্চ লভ্যাংশ দিচ্ছে। গত তিন অর্থবছরে কোম্পানি শেয়ারধারীদের নগদ ও বোনাস মিলিয়ে ৪৫ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দিয়েছে।
কোম্পানির তথ্য অনুযায়ী, ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার ফলে কোম্পানির খরচ হবে ৩৯ লাখ টাকার বেশি। প্রতি ১০০ শেয়ারের বিপরীতে শেয়ারধারীরা পাবেন ২৫টি করে শেয়ার। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সর্বশেষ শেয়ারমূল্য ছিল ২২৯ টাকা ৫০ পয়সা। এতে ২৫টি শেয়ারের বাজারমূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৫ হাজার ৭৩৭ টাকা।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা, যা ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ১ কোটি ৫৭ লাখ ২২ হাজার ৪৩৭ শেয়ারে বিভক্ত। এটি স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি। মূলধন বাড়াতে কোম্পানি কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে শেয়ারধারীদের বোনাস লভ্যাংশ দিচ্ছে। ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর শেয়ারধারীদের ১০ শতাংশ হারে বোনাস লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছে। এতে গত তিন বছরে পরিশোধিত মূলধন ১০ শতাংশ বেড়েছে। এবার সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০২১ সালের শেষে নির্দেশনা দেয়, যার মধ্যে বলা হয়েছিল শেয়ারবাজারের মূল বোর্ডে ৩০ কোটি টাকার কম মূলধনের কোনো কোম্পানি থাকতে পারবে না। এর পর স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলো বোনাস শেয়ার বা নতুন রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মূলধন বাড়াচ্ছে। অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারও এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কয়েক বছর ধরে বোনাস শেয়ার দিয়ে মূলধন বাড়াচ্ছে।
কোম্পানি–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মুনাফা কমে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—গত বছরের জুলাই–আগস্টে দেশজুড়ে ছাত্র–জনতার আন্দোলনে ব্যবসা–বাণিজ্য বন্ধ থাকা, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং ব্যাংকের সুদহার বৃদ্ধি। আন্দোলনের সময় কোম্পানির বিক্রয়কেন্দ্রগুলো এক মাসের মতো বন্ধ ছিল। এছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদ খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। সব মিলিয়ে তাই কোম্পানির মুনাফা কমে গেছে।
মুনাফা কমলেও কোম্পানির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য বেড়েছে। গত জুন শেষে স্থাবর–অস্থাবর মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য বা এনএভি দাঁড়িয়েছে ৪৩৬ টাকা ৬৮ পয়সা। আগের অর্থবছরে যা ছিল ৪৩১ টাকা ২৪ পয়সা। এক বছরের ব্যবধানে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য প্রায় ৫.৪৪ টাকা বেড়েছে।