দেশের শেয়ার বাজারে দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নতুন কোনো কোম্পানি প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) মাধ্যমে তালিকাভুক্ত হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শিল্প খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ, কারণ নতুন ভালো কোম্পানির অভাবে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, ভালো কোম্পানি হলো শেয়ার বাজারের প্রাণ। কিন্তু গত এক দশকের তালিকাভুক্তির অধিকাংশ কোম্পানি দুর্বল হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা হতাশ। এর ফলে নতুন ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে বিনিয়োগকারীর আগ্রহ বৃদ্ধি পেত।
২০২৪ সালের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি পুনর্গঠন করা হয়। কমিশন পুঁজিবাজারের কাঠামো সংস্কারের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কাজ শুরু করেছে। তবে আইপিও নীতিমালা সংস্কার এখনও শেষ হয়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সময় সরকারি ভালো কোম্পানি ও বহুজাতিক কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করেও বাজারে নতুন প্রাণ সঞ্চার করা যেত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে আইপিওর মাধ্যমে কোনো অর্থায়ন হয়নি। এ সময়ে ব্যাংক থেকে শিল্প খাতে ৮৩ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। আর্থিকভাবে শক্তিশালী কোম্পানি থাকলেও আইপিওর অভাবে পুঁজিবাজার থেকে অর্থায়ন হচ্ছে না।
আইপিও প্রক্রিয়া ও নীতিমালার সংস্কারের জন্য গঠিত টাস্কফোর্স সুপারিশ দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
-
স্টক এক্সচেঞ্জ প্রাথমিক অনুমোদন দেবে এবং বিএসইসি চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে।
-
নিরীক্ষকের দায়িত্ব ও মানদণ্ড নির্ধারণ করা হবে, যাতে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বাড়ে।
-
ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তির জন্য আইপিও ভ্যালুয়েশন বা প্রাইসিং মডেল তৈরি করা হবে।
বিএসইসি সূত্র জানায়, সরকারি ও বহুজাতিক কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার জন্য নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। পূর্বে দুর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়ে বিনিয়োগকারীদের অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নতুন নীতিমালার মাধ্যমে এই অনিয়ম এড়ানো হবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, “যদি ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়, শেয়ারের যোগান বাড়বে এবং বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।” এছাড়া, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাজেদা খাতুন বলেন, বিনিয়োগকারীরা নেতিবাচক ধারণার কারণে আইপিওতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না, পাশাপাশি ব্যাংক ঋণ তুলনামূলক সহজ হওয়ায় পুঁজিবাজারের ব্যবহার কম।
উল্লেখ্য, আইসিবি সরকারি ও বহুজাতিক ১০টি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনার উদ্যোগ নিচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, খুব শিগগিরই নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে বাজারে প্রাণ ফিরে আসবে।

