দেশের আর্থিক খাতে বড় পরিবর্তনের পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আওতায় শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি দুর্বল ব্যাংক একীভূত করে নতুন একটি ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন সমস্যাগ্রস্ত ৯টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
মোট ১৪টি প্রতিষ্ঠানের এই বড়সড় রদবদল পুঁজিবাজারে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এদের মধ্যে অনেকেই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এবং হাজার হাজার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর অর্থ এতে আটকে আছে। এই প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষাকারী সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সম্পূর্ণভাবে পাশ কাটানো হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের কাছে কোনো বার্তা না থাকায় শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। প্রায় দুই মাস ধরে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কমেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) ব্যাংক একীভূতকরণের জন্য আট সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। বিস্ময়ের বিষয়, এতে বিএসইসির কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি। তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিষয়ে বড় কোনো সিদ্ধান্ত বাজারে সরাসরি প্রভাব ফেলে। তবুও স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে এখনো সরকারি কোনো ঘোষণা নেই। ফলে কোম্পানিগুলো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করতে পারছে না।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের অন্ধকারে রেখে এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা রক্ষায় এ ধরনের প্রক্রিয়ায় বিএসইসিকে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। বিশেষ করে তালিকাভুক্ত ব্যাংক বা এনবিএফআই একীভূত বা বন্ধ হলে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা ব্যবস্থা আগে থেকে জানানো প্রয়োজন। ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, “ব্যাংক একীভূতকরণ খুব স্পর্শকাতর বিষয়। বিনিয়োগকারীদের অন্ধকারে রাখা ঠিক হয়নি। তাদের স্বার্থে স্টক এক্সচেঞ্জকেই এগিয়ে আসা উচিত ছিল, কিন্তু সেটাও হয়নি।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, ধাপে ধাপে সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে বসা হবে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চেষ্টা করা হবে। বিএসইসির মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন, “বিষয়টি আমাদের কাছে আসলে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, যেখানে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আটকে আছে সেখানে শুরু থেকেই তাদের প্রতিনিধি থাকা জরুরি। নইলে একীভূতকরণ ও বন্ধের সিদ্ধান্ত বাজারে আস্থাহীনতা বাড়াবে এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।