নৌপরিবহন উপদেষ্টার হস্তক্ষেপে এক মাস স্থগিত থাকার পর ১৪ অক্টোবর রাত ১২টা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে বর্ধিত ট্যারিফ আদায় শুরু হবে। গতকাল মঙ্গলবার বন্দরের অর্থ ও হিসাবরক্ষণ বিভাগের প্রধান মো. আবদুস শাকুর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৪ অক্টোবর রাত ১২টার পর বন্দরে আসা সব জাহাজ, কনটেইনার ও কার্গোর বিল নতুন হারে নেওয়া হবে। সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধিসহ সব ব্যবহারকারীকে বাড়তি মাশুল দিতে হবে। তালিকাভুক্ত শিপিং এজেন্টদের তফসিলি ব্যাংকে বাড়তি অর্থ জমা রেখে জাহাজের ছাড়পত্র (এনওসি) নিতে বলা হয়েছে।
এর আগে, ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুসারে ২৩টি খাতে বর্ধিত মাশুল আদায় শুরু করার ঘোষণা দিয়েছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে খরচ বেড়েছে সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ পর্যন্ত। বন্দরের ৫২টি খাতের মধ্যে ২৩টিতে মাশুল বাড়ানোর আগে এশিয়ার ১০টি ও আন্তর্জাতিকভাবে ১৭টি বন্দরের কার্যক্রম ও ট্যারিফ পর্যালোচনা করা হয়েছিল। স্পেনের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইডম এই পর্যালোচনায় সহযোগিতা করেছে।
ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করলেও মাশুল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে। প্রায় ৪০ বছর পর এই বৃদ্ধিতে রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা আপত্তি তুলেছিলেন। ২০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে এক কর্মশালায় নৌপরিবহন উপদেষ্টা (অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন) উপস্থিত ছিলেন। তখন তিনি একমাসের জন্য মাশুল আদায় স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত দেন।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, “উপদেষ্টা মহোদয় এক মাসের জন্য বর্ধিত ট্যারিফ আদায় স্থগিত করেছিলেন। আগামী ১৪ অক্টোবর রাত ১২টার পর থেকে এটি কার্যকর হবে।”
সরকারি প্রজ্ঞাপনের অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি বাড়েছে কনটেইনার পরিবহন খাত। ২০ ফুট কনটেইনারে মাশুল বেড়ে হয়েছে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকা, যা আগের চেয়ে ৪ হাজার ৩৯৫ টাকা বেশি (৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি)। আমদানি কনটেইনারে ৫৭২০ টাকা ও রপ্তানি কনটেইনারে ৩০৪৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। প্রতিটি কনটেইনার ওঠানামায় মাশুল বেড়েছে প্রায় ৩০০০ টাকা। প্রতিকেজি পণ্যের মাশুল ১ টাকা ২৮ পয়সা থেকে বেড়ে ১ টাকা ৭৫ পয়সা হয়েছে।
জাহাজের ওয়েটিং চার্জও বাড়ানো হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে ভিড়তে না পারলে ১২ ঘণ্টার জন্য ১০০ শতাংশ, ২৪ ঘণ্টার জন্য ৩০০ শতাংশ, ৩৬ ঘণ্টার জন্য ৪০০ শতাংশ এবং ৩৬ ঘণ্টার বেশি হলে অতিরিক্ত ৯০০ শতাংশ চার্জ দিতে হবে। জাহাজের পাইলটিং চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০০ মার্কিন ডলার এবং টাগ চার্জ ৬৮৩০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত।
চট্টগ্রাম বন্দর দেশের আমদানি-রপ্তানি নির্ভর সমুদ্র বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ এবং কনটেইনার ও পণ্য পরিবহনের ৯৮ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ২০২৪ সালে বন্দরে ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৬২৭ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ ৫০ হাজার ৭৯৩ টিইইউস, আর ২০২২ সালে ৩১ লাখ ৪২ হাজার ৫০৪ টিইইউস। এছাড়া বন্দর বছরে গড়ে ১৩ কোটি মেট্রিক টন কার্গো এবং ৪ হাজারের বেশি পণ্যবাহী জাহাজ হ্যান্ডলিং করে।

