নাসা গ্রুপ বেসরকারি তিনটি ব্যাংকে জমা থাকা ৩০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যবহার করে শ্রমিক ও কর্মচারীদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করবে। টাকা পরিশোধের কাজ অনলাইনে করতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত নাসা গ্রুপের অসন্তোষ নিরসন বৈঠকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এ নির্দেশনা দেয়। মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ব্যাংক খাতের মালিকদের সংগঠনের নেতৃত্ব দেন নাসা গ্রুপের কর্ণধার ও এক্সিম ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার। প্রধানমন্ত্রীর তোষামদি এবং ত্রাণ তহবিলের জন্য ব্যাংক খাত থেকে চাঁদা তোলার কারণে তিনি নিন্দিত হন। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের পর কিছুদিন তিনি গা ঢাকা দেন। পরে ২ অক্টোবর রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান। এ কারণে নাসা গ্রুপের তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন বকেয়া পড়ে।
শ্রমসচিব মো. সানোয়ার জাহান ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, শ্রম অধিদপ্তর, দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিভিন্ন ব্যাংক ও নাসা গ্রুপের প্রতিনিধিরা।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, শ্রমিকদের বকেয়া মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) যেমন বিকাশ, নগদ, রকেটের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে। যাদের এমএফএস হিসাব নেই, তাদের তালিকা তৈরি করে ১০ অক্টোবরের মধ্যে হিসাব খোলার ব্যবস্থা করতে হবে। নাসা গ্রুপের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে শ্রমিক, মালিক ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি সমন্বয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। শ্রমসচিব বৈঠকে বলেন, সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী শ্রমিকদের বকেয়া নাসা গ্রুপ পরিশোধ করবে।
নাসা গ্রুপের বিভিন্ন কারখানায় ২০ হাজারের বেশি শ্রমিক কর্মরত। তবে ২২টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে নাসা গ্রুপের খেলাপি টাকার পরিমাণ ৮ হাজার ৬৭৬ কোটি। বৈঠকে আরও বলা হয়, নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের কাছ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নেওয়ার সময় জুডিশিয়াল/এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থাকবেন। সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের বিষয় জানিয়ে নাসা গ্রুপ ভিডিও বার্তা প্রচার করবে।
এক্সিম ব্যাংকে নাসা গ্রুপের ২৪ কোটি টাকা আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ আলোচনা করে এ টাকা ছাড়ার ব্যবস্থা করবে। ইসলামী ব্যাংকের শাখায় নাসার নগদ প্রণোদনা ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এ টাকাও ছাড়ের ব্যবস্থা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। নাসা গ্রুপের রপ্তানি আয় বাবদ সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকে আছে ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ১ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট বাদ দিয়ে বাকি টাকা ছাড় করা হবে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নাসা গ্রুপের বিক্রয়যোগ্য সম্পত্তির তালিকাও করেছে। এর মধ্যে আছে এক্সিম ব্যাংকে ২৪ কোটি টাকা, গুলশান-১-এ ১২ তলাবিশিষ্ট ২টি ভবন, তেজগাঁও শিল্প এলাকায় ৩ বিঘা জমি, তেজগাঁও আড়ংয়ের বিপরীতে ৭ বিঘা, মহাখালী ডিওএইচএসে ১০ কাঠা, ঢাকার নিকেতনে ১০ বিঘা, উত্তরায় ১০ বিঘা, ১৩ নম্বর সেক্টরে প্লট, দিয়াবাড়িতে ৩টি প্লট মিলে ৪০০ কোটি টাকার সুইমিং পুল, পূর্বাচলে ২ বিঘা জমি, ২০টি প্লট ও হাসপাতাল, মেঘনা ঘাটে ১০ বিঘা জমি এবং ঠাকুরগাঁওয়ে ৩০০ বিঘা জমি। এছাড়া দুবাইয়ে খেজুরবাগান ও রিসোর্ট রয়েছে।
নাসা গ্রুপ সম্প্রতি ১৬টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২৩ সেপ্টেম্বর শ্রমিক নেতাদের উপস্থিতিতে চুক্তি স্বাক্ষর করে ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যত বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বন্ধ কারখানার মধ্যে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে ১০টি, গাজীপুরে ২টি, চট্টগ্রাম ইপিজেডে ২টি এবং কুমিল্লা ইপিজেডে ২টি কারখানা রয়েছে। অবৈধভাবে বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার ও বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকরা আশুলিয়ায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। এতে যানজট ও ভোগান্তি সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ জলকামান ও লাঠিচার্জ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে।
নাসা গ্রুপের মালিকপক্ষ ১১ সেপ্টেম্বর হাতিরঝিল ডিপোতে থাকা খেজুর বিক্রি, ১৭ সেপ্টেম্বর আশুলিয়ার ৩০ কোটি টাকা মূল্যের জমি ও ছয়তলা ভবন বিক্রি করে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের আশ্বাস দেন। এখন নাসা গ্রুপ আগামী ১৫ অক্টোবর আগস্ট মাসের এবং ৩০ অক্টোবর সেপ্টেম্বর মাসের বকেয়া বেতন-ভাতাদি পরিশোধ করবে। এছাড়া বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী, পূর্ণ বছরে চাকরির জন্য ৩০ দিনের মূল মজুরি ও মাতৃত্বকালীন ছুটির টাকা পরিশোধ করা হবে। সব বকেয়া আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে শেষ হবে।

