কনটেইনার পরিবহন ব্যবসায় নতুন উদ্যোক্তা গড়ে তুলতে দুই বছর আগে কনটেইনার আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেয় সরকার। তবে বাস্তবে কোনো অগ্রগতি হয়নি। গত দুই বছরে এই খাতে এক টাকাও বিনিয়োগ আসেনি। অথচ সমুদ্রপথে বাংলাদেশে নিয়মিত কনটেইনার পরিবহন বাড়ছে দ্রুতগতিতে।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরে এই বন্দর দিয়ে ২২ লাখ ৩৭ হাজার একক কনটেইনারে আমদানি–রপ্তানি পণ্য পরিবহন হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে পরিবহন হয়েছিল ২০ লাখ ৬৯ হাজার একক কনটেইনার। এক বছরে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৮ শতাংশ।
কনটেইনার পরিবহনে জাহাজ প্রয়োজন কিন্তু এই খাতে দেশি বিনিয়োগকারী বলতে আছে কেবল কর্ণফুলী গ্রুপ। ২০২০ সাল থেকে তারা বিনিয়োগ করছে। বর্তমানে তাদের বহরে আছে আটটি কনটেইনারবাহী জাহাজ। তবে এ ছাড়া নতুন কোনো উদ্যোক্তা এই খাতে আসেননি। ফলে ব্যবসার বড় অংশ চলে গেছে বিদেশি কোম্পানির দখলে।
শিপিং কোম্পানি ও বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৩৪১টি কোম্পানি কনটেইনার খাতে ব্যবসা করেছে। সবকটিই বিদেশি। তারা সরাসরি কিংবা এজেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করছে। বিশ্বের শীর্ষ কোম্পানিগুলোও বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তার করেছে। এর মধ্যে ডেনমার্কভিত্তিক মায়ের্সক লাইন, সুইজারল্যান্ডভিত্তিক মেডিটেরানিয়ান কোম্পানি (এমএসসি) এবং ফ্রান্সভিত্তিক সিএমএ–সিজিএম মূল নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পাশাপাশি জার্মানির হ্যাপাগ লয়েড, জাপানের ওশেন নেটওয়ার্ক এক্সপ্রেস (ওয়ান), চীনের কসকো, হংকংয়ের এসআইটিসি কনটেইনার লাইন ও ওরিয়েন্ট ওভারসিস কনটেইনার লাইনও সক্রিয়।
বাংলাদেশে বিদেশি কোম্পানিগুলো তিনভাবে ব্যবসা করছে। প্রথমত, শিপিং কোম্পানির কাছে কনটেইনার ভাড়া দিয়ে প্রতিটি ২০ ফুট কনটেইনারে দিনে আড়াই থেকে পাঁচ ডলার আয় করছে। দ্বিতীয়ত, নিজেদের কনটেইনারের পাশাপাশি ভাড়া নিয়ে পরিচালনা করছে। এসব প্রতিষ্ঠান ‘নন–ভেসেল অপারেটিং কমন ক্যারিয়ার (এনভিওসিসি)’ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে বর্তমানে এ ধরনের ৩০–৩৫টি কোম্পানি ব্যবসা করছে। তৃতীয়ত, নিজস্ব জাহাজ ও কনটেইনার ব্যবহার করে পুরো পরিবহন পরিচালনা করছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে বলা হয় ‘মেইন লাইন অপারেটর’। শীর্ষ কোম্পানি মায়ের্সক ও এমএসসির নিজস্ব জাহাজ ও কনটেইনার রয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে কনটেইনারসহ জাহাজ পরিচালনা করছে ১২টি বিদেশি কোম্পানি।
২০২৩–২৪ অর্থবছরে দেশি উদ্যোক্তা তৈরির জন্য কনটেইনার আমদানিতে শুল্ক ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়। হিমায়িত পণ্যের কনটেইনারে শুল্ক ৩১ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয় কিন্তু বাস্তবে কোনো উদ্যোগ আসেনি। ওই অর্থবছরে ৫১৭টি কনটেইনার আমদানি হয়। তার আগের বছরে ছিল ৬৭৮টি। তবে এসব কনটেইনার এসেছে মূলত উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে। ভারী যন্ত্রপাতি বা বিশেষায়িত পণ্য পরিবহনের জন্য পণ্যসহ কনটেইনার আনা হয়েছে। ব্যবসার উদ্দেশ্যে একটি কনটেইনারও আমদানি হয়নি।
একসময় কনটেইনার ব্যবসা ছিল চট্টগ্রামের কিউসি গ্রুপের হাতে। নব্বই দশকের শেষে তারা কনটেইনার জাহাজ ও কনটেইনার পরিচালনা শুরু করলেও ২০০৫ সালে আটটি জাহাজ বিক্রি করে ব্যবসা বন্ধ করে দেয়। পরে ২০২০ সালে কর্ণফুলী লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এইচআর লাইনস আবার কনটেইনার জাহাজ পরিচালনায় নামে।
বর্তমানে তাদের আটটি ফিডার জাহাজ রয়েছে। তারা জাহাজে কনটেইনার রাখার জায়গা ভাড়া দিয়ে ব্যবসা করছে। বাংলাদেশ কনটেইনার শিপিং অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ফাইয়াজ খন্দকার বলেন, শিপিং খাতে বড় উদ্যোক্তারা যুক্ত হলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বাড়বে। একই সঙ্গে দেশের অর্থ বিদেশি কোম্পানির হাতে না গিয়ে দেশেই থাকবে।