২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশে লজিস্টিকস খাতে গ্রিনফিল্ড ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট আকারে ১.৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এসেছে। দক্ষিণ এশিয়ার মোট বিনিয়োগের ৪.৯ শতাংশ এই, জানিয়েছে গ্লোবালডেটা ও ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, এই সময়কালে দেশে লজিস্টিকস এবং গুদামজাতকরণের কার্যক্রমে ১০টি প্রকল্প নিবন্ধিত হয়েছে। এছাড়া লজিস্টিকস খাতের সেলস ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে ১৮৫.৬ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। গবেষণাটি বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি এর ওয়েবসাইটে চলতি বছরের জুনে প্রকাশিত হয়।
বিনিয়োগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক আবু ধাবি পোর্টসের পরিকল্পনা। চট্টগ্রাম বন্দরে বে টার্মিনাল প্রকল্পের আওতায় তারা একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণে ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এছাড়া ডেনমার্কভিত্তিক শিপিং কোম্পানি এপি মোলার-মার্স্ক চট্টগ্রামের লালদিয়ায় একটি নতুন কনটেইনার টার্মিনাল খোলার জন্য ৪০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
তবে দক্ষিণ এশিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রকল্পের সংখ্যা ভারতের তুলনায় অনেক কম। ২৫৮টি লজিস্টিকস প্রকল্প এসেছে দক্ষিণ এশিয়ায়, যার মধ্যে ভারত শীর্ষে রয়েছে ৮৫ শতাংশ নিয়ে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতি দ্রুত পরিবর্তনশীল, যা রাজনীতি, নীতি ও প্রযুক্তি দ্বারা প্রভাবিত। সরকারের উচিত কৌশলগতভাবে বিনিয়োগ পরিকল্পনা করা। লজিস্টিকস এবং অবকাঠামো উন্নয়নের সুযোগকে উৎসাহিত করতে হবে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার দুটোই সমর্থন করবে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, পরিবেশগত প্রভাব কমাতে গ্রিন লজিস্টিকস সমাধান প্রচার করা দরকার। স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে লজিস্টিকসকে আরও কার্যকর করা সম্ভব, যেমন অপচয় কমানো, নথিপত্রের পরিমাণ হ্রাস এবং সময় ব্যবস্থাপনা উন্নত করা। এটি সরবরাহ শৃঙ্খলে ‘জাস্ট-ইন-টাইম’ বনাম ‘জাস্ট-ইন-কেস’ দ্বন্দ্বের সমাধান হিসেবে কাজ করতে পারে।
এছাড়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, এমন এলাকায় লজিস্টিকস কোম্পানি আকর্ষণ করা জরুরি যেখানে প্রকল্পের সংখ্যা বেশি এবং বড় মূলধন বিনিয়োগ রয়েছে। লক্ষ্য হওয়া উচিত মূল লজিস্টিকস কোম্পানি, ই-কমার্স, খাদ্য ও টেক্সটাইল খাত। এই খাতগুলোতে বাংলাদেশের আঞ্চলিক প্রতিযোগিতামূলক বাজার রয়েছে।
আঞ্চলিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক হতে বাংলাদেশকে লজিস্টিকস কার্যক্রমে আগ্রহী কোম্পানিগুলোর জন্য আকর্ষণীয় প্রণোদনা প্যাকেজ বিবেচনা করতে হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে-তে প্রণোদনার গুরুত্ব বাড়ছে। বিনিয়োগের মূল উৎস বাজার ও কোম্পানি চিহ্নিত করাও জরুরি।
পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম. মাসরুর রিয়াজ মন্তব্য করেছেন, “বাংলাদেশের জন্য লজিস্টিকস এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রপ্তানি-নির্ভর অর্থনীতির প্রতিযোগিতা নির্ভর করে দ্রুত ডেলিভারি ও কম ফ্রেইট খরচের উপর, যা কার্যকর লজিস্টিকসের ওপর নির্ভরশীল।”
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ভারতের তুলনায় অবকাঠামো, বন্দর, গুদামজাতকরণ ও পরিবহন সেবায় পিছিয়ে। অতীতে নিয়ন্ত্রক সীমাবদ্ধতা ও খাতভিত্তিক সক্ষমতার অভাবে বাংলাদেশ লজিস্টিকস থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
তবে এখন বন্দর, নদী টার্মিনাল, মাল্টিমোডাল পরিবহন ও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার সেবায় বৈশ্বিক খেলোয়াড়দের আকৃষ্ট করার বিলিয়ন-ডলারের সুযোগ রয়েছে। কৌশলগত বিনিয়োগ শুধু রপ্তানি বাড়াবে না, বরং বিশ্বমানের লজিস্টিকস অপারেটরদের বাংলাদেশে নিয়ে আসবে, যা বিনিয়োগ পরিবেশের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াবে।

