চট্টগ্রামভিত্তিক পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এম এন নিটওয়্যারস লিমিটেড। ১৯৮৪ সালে সীমা গার্মেন্টস নামে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠান তিন দশক ধরে তৈরি পোশাক খাতে সুনাম অর্জন করেছে। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি ৭২ লাখ ১৯ হাজার ৮২৩ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল কিন্তু গত তিন বছর ধরেই (২০২৩ সাল থেকে) তাদের পোশাক রপ্তানি সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগ করা তিন ব্যাংকের ২৪২ কোটি টাকা ঋণ ঝুঁকিতে পড়েছে। ঋণ আদায় অনিশ্চিত হওয়ায় ব্যাংকগুলো ইতিমধ্যে আইনি ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। ব্যাংকগুলোর তথ্যমতে, ওয়ান ব্যাংকের পাওনা আটকে গেছে ১০৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। ঋণ খেলাপি হওয়ার কারণে ব্যাংকটি এ পর্যন্ত ৫টি চেক প্রত্যাখ্যান মামলা (এনআই অ্যাক্ট) করেছে।
ওয়ান ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, ২০০২ সাল থেকে এম এন নিটওয়্যার ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় ব্যবসা চালাচ্ছে। রপ্তানিমুখী পোশাক ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংক ঋণ নেয়। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ঋণ শোধ নিয়মিত হলেও, গত চার-পাঁচ বছরে কিস্তি পরিশোধে গড়িমসি শুরু হয়। এর মধ্যে ঋণ তিনবার পুনঃতফসিল (রিসিডিউল) করা হয়। ঋণ সময়মতো না শোধ করার কারণে প্রতিষ্ঠানটি ঋণ খেলাপি ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যাংকের কর্মকর্তা জানান, ঋণের বিপরীতে চট্টগ্রামের ঈদগা এলাকায় ১১ শতক জমি বন্ধক রয়েছে, যার মূল্য সর্বোচ্চ দুই কোটি টাকা।
ইসলামী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার কাছে এম এন নিটওয়্যারের পাওনা ১১০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৭৪ কোটি টাকা শ্রেণিকৃত। ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের কাছে মাত্র ১৭ কোটি টাকার জমি বন্ধক আছে। ইসলামী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, এম এন নিটওয়্যার আগ্রাবাদ শাখার পুরোনো গ্রাহক।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকও আগ্রাবাদ শাখার মাধ্যমে ২৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ ঘোষণা করেছে। ব্যাংকের কর্মকর্তা জানান, ঋণের বিপরীতে জামানতের পরিমাণ খুবই কম। ইতিমধ্যে একটি চেক প্রত্যাখ্যান মামলা হয়েছে। ব্যাংক ও পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রামের ঈদগা এলাকার ব্যবসায়ী মুনির আহমেদের হাত ধরে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে। মুনির আহমেদের মৃত্যুর পর দুই সন্তান ব্যবসার দায়িত্ব নেন কিন্তু কিছু সময়ের মধ্যে তাদের ব্যবসা ভিন্নভাবে পরিচালিত হতে শুরু করে।
বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈন উদ্দিন আহমেদ। তাঁর স্ত্রী রোকসানা আহমেদ চেয়ারম্যান এবং ছেলে মুসলিম উদ্দিন আহমেদ পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মঈন উদ্দিন আহমেদ গত সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে মনোনয়ন নিতে অনেক টাকা খরচ করেছেন। এছাড়া করোনার কারণে রপ্তানি কমে গেলেও কারখানার খরচ চালাতে হয়েছে। পরে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সংকট দেখা দিলে ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে অনীহা দেখায়।
মঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, “ব্যবসায় উত্থান-পতন থাকে। প্রায় ৪০ বছর ধরে তৈরি পোশাক খাতে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছি। দুবার বিজিএমইএ ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলাম, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের পরিচালকও ছিলাম। স্থিতিশীল সরকার না থাকায় রপ্তানি অর্ডার কমেছে। তাই আপাতত উৎপাদন বন্ধ রেখেছি।” তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ সার্কুলার অনুযায়ী ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ রিসিডিউল করা হবে।
গত রবিবার নগরীর ঈদগা এলাকার কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, কারখানা বন্ধ রয়েছে। ফটকের পাশের খতিজা হার্ডওয়্যারের দোকানি বলেন, “কয়েক বছর ধরে কারখানার অবস্থা খারাপ। এক-দেড় মাস ধরে সম্পূর্ণ বন্ধ।” সম্প্রতি কারখানা পরিদর্শন করা পাওনাদার ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, ৩০ আগস্ট থেকে গ্রুপটির সব কারখানার উৎপাদন ও ব্যবসা বন্ধ।