বাংলাদেশে সার উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে গণশুনানি সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) জানিয়েছে, কারো যদি আরও মতামত থাকে, তারা ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত লিখিতভাবে কমিশন কার্যালয়ে জমা দিতে পারবেন।
পেট্রোবাংলা প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ১৬ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। তবে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) সতর্ক করে বলেছে, ভর্তুকি চূড়ান্ত না করা হলে গ্যাসের দাম বাড়ানো সার উৎপাদন ও সরবরাহে সংকট তৈরি করতে পারে।
বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, “গ্যাসের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সব দিক বিবেচনা করে ভারসাম্য রক্ষা করা হবে। কৃষি খাত ও খাদ্যের নিরাপত্তা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। একই সঙ্গে এলএনজি আমদানির খরচও বিবেচনায় আসবে।” তিনি আরও যোগ করেন, গণশুনানি একটি আইনি প্রক্রিয়া; যুক্তির যথার্থতা যাচাই করে কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
পেট্রোবাংলার প্রস্তাব অনুযায়ী, দাম বাড়ালে অতিরিক্ত ৭টি কার্গো এলএনজি আমদানি করে সারের জন্য সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত পূর্ণ মাত্রায় (২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস সরবরাহ করা হবে, এপ্রিল-মে ১৬৫ মিলিয়ন, জুনে ১৭৫ মিলিয়ন, জুলাই-সেপ্টেম্বর ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুটে সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।
বিসিআইসির পরিচালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, “২০২২ সালে একইভাবে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল, কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত হয়নি। পুরো মাত্রায় গ্যাস সরবরাহ দিলে ২০ লাখ টনের বেশি সারের উৎপাদন সম্ভব, যা আমদানিকৃত সারের তুলনায় কম খরচে পড়বে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, গ্যাসের দাম যদি ৩০ টাকা হয়, তবে কেজিপ্রতি সারের উৎপাদন খরচ ৪৬ টাকার মধ্যে থাকবে, যেখানে আমদানিতে খরচ পড়ে প্রায় ৬১ টাকা।
গণশুনানিতে ভোক্তারা গ্যাসের দাম বৃদ্ধির তীব্র বিরোধিতা করেন। তারা বলেন, সারের উৎপাদন খরচ বাড়লে কৃষকের ওপর চাপ বাড়বে এবং খাদ্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। একজন ভোক্তা স্ল্যাব পদ্ধতির প্রস্তাব দেন, যাতে বেশি গ্যাস ব্যবহারে বেশি দাম ধার্য হয়, না হলে শুধু দাম বাড়ানো হবে।
বর্তমানে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের উৎপাদন খরচ ৩৮ টাকার কাছাকাছি। বিসিআইসি সরকার থেকে ১৩ টাকার ভর্তুকি পেয়ে ২৫-২৭ টাকায় সারা বাজারে সরবরাহ করছে। গ্যাসের দাম বাড়ালে এই খরচ আরও বৃদ্ধি পাবে, তাই ভর্তুকি সুরাহা করা আগে অপরিহার্য।
বিসিআইসির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পূর্ববর্তী সরবরাহ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত হয়নি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার পিএলসি প্রায় পুরো মাত্রায় উৎপাদন করেছে, কিন্তু যমুনা ও চট্টগ্রামের সারকারখানাগুলো বিভিন্ন সময় বন্ধ ছিল। ফলে গ্যাসের অভাবে অপারেশনাল খরচও বাড়ছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মনিরুজ্জামান জানান, সারের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কোন চূড়ান্ত প্রস্তাবনা নেই, তাই কৃষকের ওপর কোনো চাপ পড়বে না। তবে উৎপাদন খরচ বাড়লে ঘাটতি পূরণের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
গণশুনানিতে পেট্রোবাংলা ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। তারা তাদের প্রস্তাব তুলে ধরেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নত্তোরে অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন পেট্রোবাংলার পরিচালক মিজানুর রহমান, পরিচালক প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, জেনারেল ম্যানেজার মেহেরুল ইসলাম, তিতাস ও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পরিচালকগণ এবং সিএনজি ফিলিং স্টেশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা রেজাবুদ্দৌলা।