অনলাইন ও অফলাইনে পণ্য বিক্রিতে বৈষম্যমূলক ভ্যাট, দ্বৈত কর, পণ্য খালাসে বিলম্ব এবং বিদেশে অর্জিত মুনাফা পাঠানোর কর-সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে সহজ সমাধান চেয়েছে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)।
গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কার্যালয়ে আয়োজিত ‘মিট দ্য বিজনেস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ফিকির নেতারা এসব দাবি তুলে ধরেন।ফিকির নির্বাহী পরিচালক নূরুল কবির অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন। এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানসহ বোর্ডের সদস্যরা এসব বিষয়ের জবাব দেন।
ফিকির পরিচালক ও এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুব উর রহমান বলেন, বিদেশি কোম্পানিগুলোর নিয়মিতভাবে ডিভিডেন্ড, রয়্যালটি পেমেন্টসহ নানা খাতে অর্থ বিদেশে পাঠানো প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে ভ্যাট, উৎসে কর এবং করবহির্ভূত খরচ (যেমন মেধাস্বত্ব) সংক্রান্ত বিধান পুনর্বিবেচনা করা জরুরি। দ্বৈত করের কারণে কোম্পানিগুলোকে প্রায়ই সমস্যায় পড়তে হয় বলেও তিনি জানান।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দারাজের একজন প্রতিনিধি বলেন, অনলাইনে পণ্য বিক্রিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়, অথচ একই পণ্য অফলাইনে বিক্রি হলে ভ্যাট ধরা হয় সাড়ে ৭ শতাংশ। যেমন, মোবাইল ফোন দোকানে বিক্রিতে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ, কিন্তু অনলাইনে তা দ্বিগুণ। তিনি এই বৈষম্য দূর করে সমান ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানান। ব্যবসায়ীরা জানান, সেবা রপ্তানিতেও কর বসানো হচ্ছে। আবার কেউ কেউ পণ্য খালাসে দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ তোলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, এনবিআরের লক্ষ্য হলো দুই দিনের মধ্যে পণ্য ছাড় দেওয়া। পণ্য আসার পর মূল্যায়ন কমিটি গঠনে বিলম্ব হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েন। তিনি বলেন, কমিটি গঠন করতে হলে তা আগেই সম্পন্ন করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যেন কোনো হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করা এনবিআরের দায়িত্ব। তিনি আরও বলেন, “আমদানি পণ্যের ভ্যালুয়েশন নিয়ে অযথা জটিলতা থাকা উচিত নয়। আইন অনুযায়ী শুল্ক আদায় করতে হবে, কিন্তু কর ফাঁকি থাকলে তা অবশ্যই ধরতে হবে।”
এনবিআর চেয়ারম্যান সতর্ক করে বলেন, “মাঠ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তা অনৈতিক আচরণ করলে বা হয়রানি করলে অনলাইনে অভিযোগ জানালে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন জনগণের টাকায় হয়, তাই ব্যবসায়ীরা কেন হয়রানি মেনে নেবেন?” তার মতে, রাজস্ব বাড়ানোর চেয়ে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করাই এখন এনবিআরের প্রধান লক্ষ্য। তিনি বলেন, “এনবিআরে মাথা বেশি, কাজের গতি কম। একে অন্যের কাছে দায়িত্ব ঠেলে দিলে সমস্যা থেকেই যায়। এই সংস্কৃতি বদলাতে হবে।”
এর আগে গত (মঙ্গলবার) রাজধানীর স্কাই সিটি হোটেলে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাকসেশন) অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “দেশের অর্থনীতি নিয়ে যত আলোচনা হয়, তার সারসংক্ষেপ হলো—রাজস্ব না বাড়াতে পারলে অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে বের হওয়া যাবে না। আয় ও ব্যয়ের মধ্যে বড় ব্যবধান তৈরি হচ্ছে।” তিনি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, “আমরা সবাই আয়কর পরিবারের সদস্য। নানা কারণে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, কিন্তু তা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে হবে।”

