Close Menu
Citizens VoiceCitizens Voice
    Facebook X (Twitter) Instagram YouTube LinkedIn WhatsApp Telegram
    Citizens VoiceCitizens Voice Sun, Nov 16, 2025
    • প্রথমপাতা
    • অর্থনীতি
    • বাণিজ্য
    • ব্যাংক
    • পুঁজিবাজার
    • বিমা
    • কর্পোরেট
    • বাংলাদেশ
    • আন্তর্জাতিক
    • আইন
    • অপরাধ
    • মতামত
    • অন্যান্য
      • খেলা
      • শিক্ষা
      • স্বাস্থ্য
      • প্রযুক্তি
      • ধর্ম
      • বিনোদন
      • সাহিত্য
      • ভিডিও
    Citizens VoiceCitizens Voice
    Home » ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপি ঋণ বাড়ছে পাগলা ঘোড়ার গতিতে
    অর্থনীতি

    ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপি ঋণ বাড়ছে পাগলা ঘোড়ার গতিতে

    কাজি হেলালOctober 12, 2025
    Facebook Twitter Email Telegram WhatsApp Copy Link
    খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে সফল ২১ ব্যাংক
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Telegram WhatsApp Email Copy Link

    ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘদিনের দুর্নীতি, লুটপাট ও অদক্ষতার ছায়া এখন গভীরভাবে পড়ছে দেশের ব্যাংকিং খাতে। বহু বছর ধরে গড়ে ওঠা শিথিল নীতি, রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্বল তদারকি আর দায়হীন ঋণ সংস্কৃতি ব্যাংক ব্যবস্থায় জমিয়ে তুলেছে অগ্রহণযোগ্য ঋণের পাহাড়। এর ফলেই খেলাপি ঋণ বাড়ছে এমন হারে যে, অনেক অর্থনীতিবিদ একে তুলনা করছেন ‘পাগলা ঘোড়ার দৌড়ের’ সঙ্গে।

    বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত আজ এক গভীর সংকটের মুখে। ঋণ আদায়ের দুর্বলতা ও অদক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে ব্যাংকগুলোর তারল্য কমে যাচ্ছে, আর অর্থনীতির রক্তপ্রবাহে তৈরি হচ্ছে ভয়াবহ চাপ। একদিকে আমানতকারীদের আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে বিনিয়োগ ও উৎপাদন কার্যক্রমে পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। টিকে থাকার সংগ্রামে এখন অনেক ব্যাংক সরকারি সহায়তার দিকে তাকিয়ে আছে, অথচ নতুন উদ্যোক্তারা পাচ্ছেন না প্রয়োজনীয় ঋণ। বাস্তবতা হলো এই সমস্যা আর সাময়িক নয়; এটি এখন জাতীয় অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য এক বড় হুমকি। তাই সময় এসেছে কাগজে-কলমের প্রতিশ্রুতির বাইরে গিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে দুর্নীতি, অদক্ষতা ও দায়মুক্তির সংস্কৃতি ভেঙে ব্যাংকিং খাতকে পুনর্গঠনের পথে আনার।

    খেলাপি ঋণের বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত এখন এক ভয়াবহ সংকটের মুখে। দীর্ঘদিনের দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাব, অদক্ষতা এবং দায়হীন ঋণ সংস্কৃতির কারণে খেলাপি ঋণ এমনভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে যে, অর্থনীতিবিদরা একে তুলনা করছেন “পাগলা ঘোড়ার গতির” সঙ্গে।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পাওয়ায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি দৃশ্যমান হয়েছে। অনেক শিল্পমালিক বিদেশে পালিয়ে গেছেন, কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, এসব কারণেও খেলাপি ঋণের বোঝা আরও বেড়েছে। ব্যাংকের ফরেনসিক অডিটে বেরিয়ে আসছে বহু বছরের গোপন অনিয়ম, অগ্রহণযোগ্য ঋণ বিতরণ এবং প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতাদের বিশেষ সুবিধার তথ্য।

    প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, “খেলাপি ঋণ এখন প্রায় ২৪ শতাংশের মতো। এর মূল কারণ শেখ হাসিনার আমলে সংঘটিত ব্যাপক দুর্নীতি ও ব্যাংক খাতের লুটপাট। সেই সময় ব্যাংকগুলোকে যেভাবে ফাঁকা করে দেওয়া হয়েছিল, তার ফলেই আজ ব্যাংকিং সেক্টরের এই দুরবস্থা।” তিনি আরও জানান, ব্যাংক খাতের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে এখন কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছেন, খেলাপি ঋণ কমিয়ে চার থেকে পাঁচ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পাঁচটি ইসলামি ব্যাংক একীভূত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যা বাস্তবায়নের পথে এবং নয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্তও প্রক্রিয়াধীন।

    ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সময় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। ১৫ বছর পর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালের জুনে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা, যা এই বছরের জুন শেষে মাত্র এক বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৭ কোটি টাকা। যা বিতরণ করা মোট ঋণের ২৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংক খাতের বিতরণ করা মোট ঋণের প্রায় চার ভাগের এক ভাগের বেশিই ইতিমধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে। গত মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। তখন খেলাপি ঋণের হার ছিল ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ।

    যা সেপ্টেম্বর শেষে সম্প্রতি প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, জুন-২০২৫ শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা। যা বিতরণ করা ঋণের ৩৩ শতাংশ। বর্তমানে ব্যাংক খাতে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি ৩ হাজার ৪৮৩ জন। প্রথমবারের মতো এই তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই খেলাপি ঋণ শুধু অর্থনীতির জন্য নয়, বরং ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থার জন্যও এক মারাত্মক হুমকি।
    ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে, তা না হলে ব্যাংক খাতে আরও ধস নামবে।

    বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের শেষে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ছিল ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। ২০২৫ সালের জুন শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ০৯ শতাংশ, যা ব্যাংক খাতে বিতরণ করা মোট ঋণের প্রায় এক-চতুর্থাংশ। অর্থাৎ দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি ৪ টাকার মধ্যে ১ টাকাই এখন খেলাপি।

    রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক। মাত্র ছয় মাসে এসব ব্যাংকের শ্রেণীকৃত ঋণ ১০ শতাংশ বেড়ে জুনে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয় ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ছয় ব্যাংকের ১২০ জন শীর্ষস্থানীয় খেলাপি গ্রাহকের (প্রতিটি ব্যাংকের ২০ জন করে) কাছে আটকা ৮৫ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা। রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয় ব্যাংক হলো সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল। রাজনৈতিক প্রভাব ও অনিয়মিত ঋণ বিতরণই এর প্রধান কারণ বলে ব্যাংকগুলো নিজেদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

    বিশ্লেষকরা বলছেন, বছরের পর বছর অব্যবস্থাপনা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, দায়মুক্তি এবং ঋণ পুনর্গঠনের নামে ঋণগ্রহীতাদের অবাধ ছাড় দেওয়ার ফলে ব্যাংক খাত আজ গভীর সংকটে পড়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
    অর্থনীতিবিদদের মতে, এখন সময় এসেছে ‘কাগজে সংস্কার’ নয়, বরং বাস্তব পদক্ষেপে ব্যাংক খাতকে পুনর্গঠনের। নীতিগত কঠোরতা, দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে যদি এখনই পুনরুদ্ধার না করা যায়, তবে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি আরও গভীর অস্থিরতার মুখে পড়বে।

    খেলাপি ঋণের প্রধান কারণসমূহ: বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ এখন একটি গুরুতর আর্থিক সংকটে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকায়, যা দেশের মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় এক-চতুর্থাংশ বা ২৪ শতাংশেরও বেশি। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি প্রায় ৪৬ শতাংশের কাছাকাছি। ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর অবস্থাও আশাব্যঞ্জক নয়; সেখানেও খেলাপি ঋণের হার ২০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এই প্রবণতা বাংলাদেশের আর্থিক খাতকে এক ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।

    খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির মূল কারণ খুঁজে দেখা গেলে কয়েকটি বড় প্রবণতা স্পষ্ট হয়। প্রথমত: গত কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে ব্যাংক ঋণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছিলেন, যার অনেকটাই আর ফেরত আসেনি। সেই সময় অনেক ঋণ খেলাপি থাকলেও তা ইচ্ছাকৃতভাবে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল, যেন ব্যাংক খাতের প্রকৃত চিত্র প্রকাশ না পায়। সরকার পরিবর্তনের পর এসব গোপন ঋণ এখন প্রকাশ্যে আসছে, ফলে খেলাপি ঋণের পরিসংখ্যান হঠাৎ বেড়ে গেছে।

    দ্বিতীয়ত: ব্যবসা-বাণিজ্যে দীর্ঘমেয়াদি স্থবিরতা ও অর্থনৈতিক মন্দা ঋণ পরিশোধে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে বিনিয়োগ কমেছে, উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে, রপ্তানি আয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, ফলে অনেক উদ্যোক্তা সময়মতো ঋণ শোধ করতে পারছেন না। উচ্চ সুদের হার এবং বিদেশি মুদ্রার সংকট ব্যবসায়িক নগদ প্রবাহ আরও দুর্বল করেছে।

    তৃতীয়ত: বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে ঋণ শ্রেণীকরণে আন্তর্জাতিক নিয়ম প্রয়োগ শুরু করেছে। আগে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণকে অনেক সময় পর খেলাপি ধরা হতো, কিন্তু এখন নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পরিশোধ না হলে তা দ্রুত মেয়াদোত্তীর্ণ ও অনাদায়ী হিসেবে গণ্য হচ্ছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ঋণ ৯০ দিন বা ৩ মাস অনাদায়ী থাকলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে খেলাপি হয়ে যায়। ফলে পূর্বে “স্বাস্থ্যবান” বা “পুনঃতফসিল” দেখানো অনেক ঋণ এখন খেলাপি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

    চতুর্থত: বহু বছর ধরে ব্যাংকগুলো ঋণ মূল্যায়ন ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় দুর্বল ছিল। অনেক ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায় বা ব্যক্তিগত প্রভাবের কারণে, ব্যবসায়িক সক্ষমতা যাচাই না করেই। আবার ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠনের সুযোগের অপব্যবহারও হয়েছে, খেলাপি ঋণকে কাগজে ‘সুস্থ ঋণ’ দেখানোর জন্য বারবার সময় বাড়ানো হয়েছে।

    এস আলম গ্রুপের মতো রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলো যেমন: ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এর ঋণপোর্টফোলিওর প্রকৃত চিত্র এখন স্পষ্ট হচ্ছে। এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে তাদের একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে এবং প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।

    খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির ফলে ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণের জন্য বিপুল পরিমাণ প্রভিশন বা সংরক্ষণ রাখতে হচ্ছে, ফলে নতুন ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ হ্রাস পাচ্ছে, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান কমছে এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে স্থবিরতা দেখা দিচ্ছে। ব্যবসায়ী মহলে ব্যাংকিং খাতের ওপর আস্থা কমে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে মূলধন সংকট ও আর্থিক অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

    বাংলাদেশ এখন এশিয়ার মধ্যে খেলাপি ঋণে শীর্ষ অবস্থানে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের হার সর্বাধিক। ভারতের মতো বড় অর্থনীতিতে খেলাপি ঋণ ২ শতাংশেরও নিচে নেমে এসেছে, কিন্তু বাংলাদেশে তা কয়েকগুণ বেশি।

    এই অবস্থায় ব্যাংক খাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে কঠোর নীতি প্রয়োগ, দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং ঋণ পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। ঋণ বিতরণে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা, ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ শাসনব্যবস্থা জোরদার করা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি কার্যকর করা জরুরি। নইলে খেলাপি ঋণ শুধু ব্যাংক নয়, পুরো অর্থনীতির জন্য এক গভীর আর্থিক দুর্যোগে পরিণত হবে।

    বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের প্রভাব দিন দিন গভীর হচ্ছে। খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি ব্যাংকগুলোর সুদ আয় কমিয়ে মুনাফা হ্রাস করছে এবং লভ্যাংশ বিতরণে সরাসরি প্রভাব ফেলছে। এর সঙ্গে সঙ্গে আমানতকারীদের মধ্যে আস্থা কমে যাচ্ছে, যা নগদ উত্তোলনের প্রবণতা বাড়াচ্ছে এবং ব্যাংকের দৈনন্দিন পরিচালনায় চাপ সৃষ্টি করছে। নতুন ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা সংকুচিত হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়ন সম্ভব হচ্ছে না, ফলে অর্থনীতির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

    অর্থনৈতিক প্রভাবও বড়। খেলাপি ঋণ মেটাতে সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অতিরিক্ত অর্থ সরবরাহ করতে হয়, যা বাজারে অতিরিক্ত নগদ যোগ করে মুদ্রাস্ফীতি বাড়াতে পারে। একই সঙ্গে জনগণের করের টাকাই ব্যবহার হয় ব্যাংক সহায়তার জন্য; যা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য জনসেবা খাতে ব্যয় হওয়া উচিত ছিল। খেলাপি ঋণ যদি আরও বৃদ্ধি পায়, তবে এটি সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকেও হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

    রাজনৈতিক প্রভাবও এই সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে। অনিয়মিত ঋণ বিতরণ ও রাজনৈতিক চাপের কারণে অনেক ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণ আদায় কঠিন হয়ে পড়েছে, যার ফলে ব্যাংকের সুশাসন দুর্বল হচ্ছে। এর পাশাপাশি কিছু অসৎ ঋণগ্রহীতার জন্য এই পরিস্থিতি ব্যক্তিগত সুবিধার সুযোগ তৈরি করছে, যেখানে সৎ ঋণগ্রহীতারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক খাতের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে এখন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। খেলাপি ঋণ কমিয়ে চার থেকে পাঁচ শতাংশের মধ্যে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বাস্তবায়নের জন্য দৃঢ় নীতি, জবাবদিহিতা এবং নিয়ন্ত্রক তদারকি অত্যাবশ্যক, নাহলে খেলাপি ঋণের সংকট শুধু ব্যাংক নয়, পুরো অর্থনীতিকেই অস্থিতিশীল করে তুলবে।

    বাস্তবসম্মত ও প্রাধান্যভিত্তিক সুপারিশ: বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ কমানো আজ সময়ের এক জরুরি চ্যালেঞ্জ। এর জন্য প্রথম এবং প্রধান শর্ত হলো সুশাসন, স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে, যাতে বড় খেলাপিদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যায় এবং তারা কোনো প্রভাব খাটাতে না পারে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও স্বায়ত্তশাসিত, নিরপেক্ষ এবং শক্তিশালী করে গড়ে তোলা প্রয়োজন, যাতে এটি ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম মনিটর করতে এবং নীতিমালা কার্যকর করতে সক্ষম হয়। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ পরিচালনা ব্যবস্থা আরো স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে, যাতে কোনো অনিয়ম সহজে বেড়ে না ওঠে।

    ঋণ অনুমোদন ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় কঠোরতা আনাও অপরিহার্য। ঋণ দেওয়ার আগে ঋণগ্রহীতার সম্পদ, আর্থিক সক্ষমতা এবং ব্যবসায়িক সম্ভাবনা পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই করতে হবে। ঋণ সংক্রান্ত নিরাপত্তা, তারল্য এবং লাভজনকতার নীতিমালা কঠোরভাবে মানা ও আধুনিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ব্যবহার করা আবশ্যক। এতে ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ প্রদানে দক্ষ ও সতর্ক হবে এবং খেলাপি ঋণের ঝুঁকি কমবে।

    আইনগত ও পদ্ধতিগত সংস্কারও গুরুত্বপূর্ণ। ঋণ আদায় প্রক্রিয়াকে সহজ ও কার্যকর করতে বিদ্যমান আইনগুলোকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। বড় এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, যাতে তাদের বিরুদ্ধে উদ্ভূত অনিয়ম শাসিত হয়। প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে খেলাপি ঋণ শনাক্ত ও আদায় প্রক্রিয়া দ্রুততর করা যেতে পারে।

    কিছু ক্ষেত্রে ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে, বিশেষ করে যেখানে ঋণগ্রহীতার সাময়িক আর্থিক সমস্যা রয়েছে, তবে এটি অবশ্যই একটি নিয়মিত কাঠামোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে এবং অপব্যবহার রোধ করতে হবে। ঋণ আদায়কারী দলগুলোকে আরও পেশাদার ও কার্যকর করে গড়ে তুললে খেলাপি ঋণ দ্রুত আদায় সম্ভব হবে।

    পরিশেষে অর্থনৈতিক ও কাঠামোগত সমাধানগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, উৎপাদনশীল ও সম্ভাবনাময় খাতে ঋণ প্রবাহ নিশ্চিত করা ব্যাংকিং খাতকে সুস্থ রাখার জন্য অপরিহার্য। এই সব পদক্ষেপ একসাথে বাস্তবায়িত হলে খেলাপি ঋণের বোঝা কমানো সম্ভব হবে এবং দেশের ব্যাংকিং খাত পুনরায় শক্তিশালী ও স্থিতিশীল হয়ে উঠবে।

    বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত আজ এক সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে। খেলাপি ঋণ শুধু ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতাকেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে না, বরং দেশের অর্থনীতির রক্তপ্রবাহেও সরাসরি প্রভাব ফেলছে। দীর্ঘদিনের দুর্নীতি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, দায়মুক্তি ও অদক্ষ ঋণ নীতি খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির মূল কারণ। তবে সময় এখনো হাতে আছে সুশাসন, স্বচ্ছতা, শক্তিশালী তদারকি ও আধুনিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই সংকট প্রতিরোধ করা সম্ভব।

    খেলাপি ঋণ কমানো মানে কেবল ব্যাংকের ক্ষতি রোধ নয়, এটি দেশের বিনিয়োগ, উৎপাদন ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যও অপরিহার্য। বড় খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ, ঋণ যাচাই প্রক্রিয়ার শক্তিশালীকরণ এবং উৎপাদনশীল খাতে ঋণের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করলেই ব্যাংকিং খাত পুনরায় স্বাস্থ্যবান ও স্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। এই পদক্ষেপগুলো এখনই নেওয়া প্রয়োজন, নইলে দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব অপরিহার্যভাবে বাড়বে। ইতিহাস বলে, ‘সময় যত বাড়ে, সমন্বয় করে সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেওয়া ততই কঠিন হয়’। তাই আজই সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।

    Share. Facebook Twitter LinkedIn Email Telegram WhatsApp Copy Link

    সম্পর্কিত সংবাদ

    অর্থনীতি

    শীতের শুরুতেই সবজির বাজারে আগুন

    November 15, 2025
    অর্থনীতি

    চীনের প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ এগোচ্ছে ডিজিটাল অর্থনীতিতে

    November 15, 2025
    অর্থনীতি

    শুধু সুদের হার বাড়ালে কি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব?

    November 15, 2025
    Leave A Reply Cancel Reply

    সর্বাধিক পঠিত

    সাউথইস্ট ব্যাংকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাত

    আইন আদালত October 7, 2025

    ক্রেতারা ভারত-চীন ছাড়ছে, বাংলাদেশ পাচ্ছে অর্ডার

    অর্থনীতি August 15, 2025

    সব ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী নয়

    মতামত January 13, 2025

    বরিশালের উন্নয়ন বঞ্চনা: শিল্প, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও পর্যটন খাতে নেই অগ্রগতি

    মতামত April 22, 2025
    সংযুক্ত থাকুন
    • Facebook
    • Twitter
    • Instagram
    • YouTube
    • Telegram

    EMAIL US

    contact@citizensvoicebd.com

    FOLLOW US

    Facebook YouTube X (Twitter) LinkedIn
    • About Us
    • Contact Us
    • Terms & Conditions
    • Comment Policy
    • Advertisement
    • About Us
    • Contact Us
    • Terms & Conditions
    • Comment Policy
    • Advertisement

    WhatsAppp

    01339-517418

    Copyright © 2025 Citizens Voice All rights reserved

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.