সরকার আগামী জানুয়ারি থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদহার আরও দেড় শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে সরকারের ঋণ ব্যয় কমবে, তবে বিপদে পড়বেন অবসরপ্রাপ্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ—যাঁরা সঞ্চয়পত্রকে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে দেখতেন।
সরকার দীর্ঘদিন বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র বিক্রির ওপর নির্ভরশীল ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ট্রেজারি বিল ও বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে সস্তায় ঋণ নেওয়ার দিকে ঝুঁকছে সরকার। বর্তমানে এসব বিল-বন্ডের গড় সুদহার সঞ্চয়পত্রের চেয়ে কম হওয়ায় আবারও সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত এসেছে। এতে সরকারের ঋণ ব্যয় সাশ্রয় হবে, কিন্তু প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের আর্থিক নিরাপত্তায়।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে দুটি প্রধান কারণ দেখা যাচ্ছে—ঋণের ব্যয় কমানো এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণ। তবে মূল্যস্ফীতি যখন সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে চাপে ফেলেছে, তখন সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমানো নিম্ন ও মধ্যবিত্তের জন্য আরও বড় বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ক্রমেই কমছে। শুধু গত জুলাই মাসেই নিট বিক্রি কমেছে ৪১ শতাংশের বেশি। অনেকেই এখন সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্য বিনিয়োগের বিকল্প খুঁজছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও চাইছে, মানুষের আগ্রহ ট্রেজারি বিল বা বন্ডের দিকে যাক।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারের এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক বলা যেত যদি একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের জন্য বিকল্প ও নিরাপদ বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করা হতো। কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে কেবল সুদহার কমানোকে তাঁরা অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত বলছেন। এতে একদিকে সরকারের ঋণ গ্রহণ সহজ হবে, অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রের টাকার ওপর নির্ভরশীল বিপুল জনগোষ্ঠী আর্থিক অনিশ্চয়তায় পড়বেন।
তাঁরা মনে করেন, সরকারের উচিত হবে ঋণের ব্যয় কমানোর পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রনির্ভর মানুষের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে অন্যান্য নিরাপদ বিনিয়োগ খাতকে আকর্ষণীয় করে তোলা প্রয়োজন। কারণ নাগরিকের সঞ্চয়ের প্রতি আস্থা নষ্ট হলে সেটি অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হবে।