দেশে এখন আর ডলারের সংকট নেই। ফলে আমদানির ওপর থাকা কড়াকড়িও শিথিল হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। বেড়েছে ভোগ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই ও আগস্ট—এই দুই মাসে ১১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। আগের বছর একই সময়ে পরিমাণটি ছিল ১০ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে নিষ্পত্তি হয়েছে ১১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছর ছিল ১০ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন। অর্থাৎ এলসি খোলা বেড়েছে ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং নিষ্পত্তি বেড়েছে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ।
ইউক্রেন যুদ্ধের সময় বিশ্ববাজারে ডলারের ঘাটতি দেখা দিলে বাংলাদেশেও নানা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। বিলাসপণ্য, বিদেশগমন ও অপ্রয়োজনীয় খাতে এলসি খোলা কঠোরভাবে সীমিত করা হয়। এর ফলে আমদানি অনেক কমে গিয়েছিল।
কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। রিজার্ভ বেড়েছে, ব্যাংকগুলোতে ডলারের সরবরাহও ভালো। ফলে ধীরে ধীরে আমদানি ফিরছে স্বাভাবিক ছন্দে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. এজাজুল ইসলাম বলেন, ‘ডলারের বাজার এখন অনেকটা স্থিতিশীল। ব্যাংকগুলোতে পর্যাপ্ত মজুত থাকায় এলসি খোলায় আর আগের মতো কড়াকড়ি নেই। ফলে ভোগ্যপণ্য, কাঁচামাল ও সারসহ সামগ্রিক আমদানিতে গতি এসেছে।’
তথ্য অনুযায়ী,
- ভোগ্যপণ্য খাতে এলসি খোলা হয়েছে ৯৯ কোটি ডলারের, যা গত বছর ছিল ৯০ কোটি ৭০ লাখ ডলার। নিষ্পত্তিও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২ কোটি ডলারে। অর্থাৎ এলসি খোলা বেড়েছে ৯ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং নিষ্পত্তি বেড়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
- মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে এলসি খোলা হয়েছে ২৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারের, আগের বছর ছিল ২৬ কোটি ২০ লাখ। তবে নিষ্পত্তি কমে দাঁড়িয়েছে ৩০ কোটি ৯০ লাখ ডলারে, যেখানে গত বছর ছিল ৩৫ কোটি ১০ লাখ ডলার।
- শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমে হয়েছে ৬৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার, যা গত বছর ছিল ৭৫ কোটি ৩০ লাখ। এক বছরে এই খাতে এলসি খোলা কমেছে ১১ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং নিষ্পত্তি কমেছে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।
- পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানিতে এলসি খোলা বেড়ে হয়েছে ১৪৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার, আগের বছর ছিল ১৩৯ কোটি ৪০ লাখ। তবে নিষ্পত্তি সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে ১৪৪ কোটি ২০ লাখ ডলারে।
- বিবিধ পণ্য আমদানিতে এলসি খোলার হার বেড়েছে ১৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং নিষ্পত্তিতে প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে মোট ৬ হাজার ৮৩৫ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। এর আগের বছর পরিমাণটি ছিল ৬ হাজার ৬৭২ কোটি ডলার। এক বছরে আমদানি বেড়েছে ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, ‘আমদানি বেড়ে যাওয়া শিল্প খাতের জন্য ইতিবাচক খবর। পর্যাপ্ত ডলার থাকায় ব্যবসায়ীরা এখন আগের মতো আত্মবিশ্বাসীভাবে পণ্য আনছেন। এতে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান দুটোই বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।’
সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। ৩১ মাস পর তা ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই শেষে রিজার্ভ ছিল ৩০ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার, আগস্টে বেড়ে হয়েছে ৩১ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলার। রিজার্ভ বাড়তে থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেই এখন বাজার থেকে ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার কিনেছে।