ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন ও বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন প্রকল্পের লক্ষ্য হলো দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বল্পমূল্যে উন্নত ও আধুনিক মানের কার্ডিয়াক বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা দেওয়া। পাশাপাশি প্রতিদিন ৩০ শতাংশ দরিদ্র রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হবে।
সরকার সম্প্রতি ‘ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের মেডিকেল যন্ত্রপাতি আধুনিকীকরণ ও বিশ্বমানে উন্নীতকরণ প্রকল্প’ অনুমোদন দিয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। মোট খরচ ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। প্রকল্পটি কার্যকর হবে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত।
প্রকল্পের মূল কাজের মধ্যে আছে ২ হাজার ৪১৮টি মেডিকেল যন্ত্রপাতি কেনা, যার জন্য খরচ ধরা হয়েছে ২০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এছাড়া এনজিওগ্রাম মেশিন ২টি, সিটি এনজিওগ্রাম মেশিন ১টি এবং এমআরআই মেশিন ১টি কেনা হবে। এসব মেশিনের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ২৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা। অপারেশন থিয়েটার তৈরি করা হবে ২টি। মেডিকেল ইক্যুইপমেন্টে খরচ হবে ৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য সম্মানী ভাতা রাখা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। দরপত্র আহ্বান ও বিজ্ঞাপনের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ১৩ লাখ টাকা।
প্রকল্প অনুমোদনের প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০২২ সালের ১৪ জুলাই। পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) প্রথমে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করলেও বিভিন্ন সংশোধনের কারণে প্রক্রিয়া আটকে যায়। এরপর স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ সংশোধিত প্রকল্প ২০২৫ সালের ২০ মে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়। সব প্রক্রিয়া শেষে সম্প্রতি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মোট খরচ ৫০ কোটি টাকার কম হওয়ায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ অনুমোদন দেন। নিয়ম অনুযায়ী একনেক সভায় প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হয়।
ডিপিপি অনুযায়ী, প্রকল্পের লক্ষ্য হলো সব ধরনের হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উন্নত মানের যন্ত্রপাতির মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা প্রদান করা। এছাড়া ৩০ শতাংশ দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত রোগী বিনামূল্যে সেবা পাবেন। প্রকল্পের মোট খরচ ৪৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, যার মধ্যে সরকারি কোষাগার থেকে খরচ হবে ২৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন থেকে খরচ হবে ১৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
প্রকল্প গ্রহণের যৌক্তিকতা স্পষ্ট। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা. আবদুল মালিক। প্রতিষ্ঠার পর ২০২১ সাল পর্যন্ত ২ লাখের বেশি রিং স্থাপন, ৩৬ হাজারের মতো বাইপাস অপারেশন এবং ২ লাখ ৮৯ হাজারের বেশি রোগীকে ওপিডি সেবা প্রদান করা হয়েছে। হাসপাতালে বাইপাস অপারেশনে মৃত্যুর হার আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ।
পিইসি সভায় প্রকল্প কার্যকর করার জন্য কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেমন, প্রকল্প পরিচালকসহ জনবল নিয়োগে অর্থ বিভাগের সুপারিশ মানা, প্রতি অর্থবছরে চারটি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি ও স্টেয়ারিং কমিটির সভা আয়োজন, কেনা যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা। চিকিৎসা যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে খরচ বৃদ্ধি হলে অতিরিক্ত অর্থ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের নিজস্ব খাত থেকে ব্যয় করতে হবে। পাশাপাশি ৩০ শতাংশ সুবিধাবঞ্চিত ও দরিদ্র রোগীকে বিনামূল্যে সেবা প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।