রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে আজ (মঙ্গলবার) সকালে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সভায় সভাপতিত্ব করবেন। এটি চলতি অর্থবছরের চতুর্থ এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ১৫তম একনেক সভা।
সভায় মোট ১২টি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এর মধ্যে ৪টি নতুন, ৫টি সংশোধিত এবং ৩টি মেয়াদ বৃদ্ধি প্রকল্প। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১২টি প্রকল্পের মধ্যে ৬টি সরকারি অর্থায়নে, ১টি সরকারি ও বৈদেশিক ঋণসহায়তায়, ১টি সরকারি ও সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে এবং ১টি বৈদেশিক অনুদানভিত্তিকভাবে বাস্তবায়িত হবে। পরিকল্পনা বিভাগের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) এস এম রেজাউল মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, একনেক সভায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের চার বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্প উপস্থাপন করা হবে।
কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৪ প্রকল্প:
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের অধীনে চারটি প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ের ‘প্রো-অ্যাক্ট বাংলাদেশ: কক্সবাজারে কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থা রূপান্তরের মাধ্যমে সহনশীলতা বৃদ্ধি’ প্রকল্পটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। মেয়াদ ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ‘গ্রামীণ মাটির রাস্তাসমূহ টেকসইকরণের লক্ষ্যে হেরিং বোন বন্ডকরণ (এইচবিবি)’ প্রকল্পের মেয়াদ তৃতীয়বার বাড়ানো হয়েছে। ৩ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকার প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১০৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকায়। মেয়াদ বাড়ছে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ‘জলবায়ু-সহনশীল জীবনমান উন্নয়ন’-এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। একই বিভাগের আরেক প্রকল্প ‘খুলনা বিভাগ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন (তৃতীয় সংশোধন)’—এর ব্যয় ২ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।
ভৌত অবকাঠামো খাতে ৫ প্রকল্প:
এই খাতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ‘জামালপুর শহরের নগর স্থাপত্যের পুনঃসংস্কার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উন্নয়ন (তৃতীয় সংশোধন)’ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮৮ কোটি টাকা। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ‘১ থেকে ৫ নম্বর জোনের অভ্যন্তরীণ রাস্তা, নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ (তৃতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ‘উত্তরা লেক উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পের মেয়াদ ষষ্ঠবার বাড়ানো হয়েছে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত, তবে ব্যয় বাড়ছে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ভবন নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬১ কোটি টাকা, মেয়াদ ২০২৬ সালের জুনে শেষ হবে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ‘কিশোরগঞ্জ-পাকুন্দিয়া, মির্জাপুর-টোক জেলা মহাসড়ক উন্নীতকরণ (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৭২০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
শিল্প ও শক্তি খাতে ২ প্রকল্প:
শিল্প মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পদার্থ ও রসায়ন পরীক্ষার ল্যাবরেটরির সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন’ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৫২ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ‘ঘোড়াশাল তৃতীয় ইউনিট রি-পাওয়ারিং (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্পের ব্যয় ২ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। এটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালের অক্টোবরে।
সামাজিক অবকাঠামো খাতে ১ প্রকল্প:
এ বিভাগের প্রকল্প হলো ‘মানসিক হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, পাবনা’। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে আজকের একনেক সভায় ১২টি প্রকল্পের অনুমোদন প্রস্তাব উঠছে, যার মধ্যে দুটি বড় প্রকল্প হলো ‘জলবায়ু-সহনশীল জীবনমান উন্নয়ন’ এবং ‘বিএসটিআই ল্যাবরেটরি সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন’।