বাংলাদেশে ডিজিটাল ব্যাংকিং খাত নতুন দিগন্তে পা রাখতে চলেছে। দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আকিজ রিসোর্স এবার শরিয়াহভিত্তিক একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ব্যাংকটির প্রস্তাবিত নাম—‘মুনাফা ইসলামিক ডিজিটাল ব্যাংক’।
কোম্পানির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহেই বাংলাদেশ ব্যাংকে লাইসেন্সের জন্য আবেদন জমা দেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আকিজ রিসোর্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ জসিম উদ্দিন বলেন,
“আমরা এমন একটি ইসলামিক ডিজিটাল ব্যাংক গড়ে তুলতে চাই, যা হবে সম্পূর্ণ শরিয়াহভিত্তিক। এখানে থাকবে স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা ও অংশীদারিত্বভিত্তিক লাভ-বণ্টনের নিশ্চয়তা।”
তিনি জানান, ইতোমধ্যে বিদেশি বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারীর সঙ্গে তাদের আলোচনা হয়েছে, এবং অনেকে প্রকল্পটিতে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। “আগামী সপ্তাহেই আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন জমা দেবো,” যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্সের সময়সীমা বাড়িয়ে ২ নভেম্বর পর্যন্ত করেছে। আগের সরকারের সময়ে এ উদ্যোগ শুরু হয়, যেখানে ৫২টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছিল। তবে ‘নগদ’ ও ‘কড়ি’ ছাড়াও কেউ তখন অনুমোদন পায়নি। অর্থায়ন সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ওই দুটি ব্যাংকের কার্যক্রমও স্থগিত ছিল।
আকিজ রিসোর্স এবার সেই প্রক্রিয়ায় নতুন করে যোগ দিচ্ছে, তবে একটি স্পষ্ট শরিয়াহভিত্তিক মডেল নিয়ে।
কোম্পানির প্রধান ব্যবসা উন্নয়ন কর্মকর্তা তৌফিক হাসান বলেন,
“ডিজিটাল ব্যাংকিং খাতে এখন দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। মানুষ নগদহীন লেনদেনে অভ্যস্ত হচ্ছে। এই সময়টিই আমাদের জন্য ব্যাংকিং খাতে প্রবেশের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।”
অন্যদিকে, আকিজ রিসোর্সের প্রধান ডিজিটাল ও উদ্ভাবনী কর্মকর্তা মো. ফিরোজ কবির জানান, তারা ইতোমধ্যেই একটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল ব্যাংকিং ইকোসিস্টেম তৈরি করেছেন, যেখানে গ্রাহকরা লেনদেন ফি ছাড়াই সহজ ও নিরাপদ আর্থিক সেবা পাবেন।
তিনি বলেন, “আমাদের প্রযুক্তিভিত্তিক অবকাঠামো এখন প্রস্তুত। এর মাধ্যমে আমরা চাই প্রতিটি নাগরিককে আর্থিকভাবে ক্ষমতায়িত করতে।”
‘মুনাফা ইসলামিক ডিজিটাল ব্যাংক’ তিনটি মূল লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ শুরু করতে চায়—
১. নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ, প্রবাসী বাংলাদেশি, তরুণ, নারী উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসায়ী—সবাই যেন সহজে ব্যাংকিং সেবা পান।
২. উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের জন্য মূল্যশৃঙ্খলাভিত্তিক অর্থায়ন মডেলের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো।
৩. “সবার জন্য শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং”—এই স্লোগান নিয়ে পুরোপুরি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক ইসলামিক ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করা।
কোম্পানির পরিকল্পনা অনুযায়ী, লাইসেন্স পেলে ২০৩০ সালের মধ্যে তারা ২ কোটি সক্রিয় গ্রাহক অ্যাকাউন্ট এবং ৩৫ লাখ ডিজিটাল কনজিউমার ফাইন্যান্স গ্রাহক অর্জনের লক্ষ্য নিয়েছে।
বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির যাত্রায় ‘মুনাফা ইসলামিক ডিজিটাল ব্যাংক’ একটি বড় মাইলফলক হতে পারে। দেশীয় পুঁজির পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সম্পৃক্ততা এই উদ্যোগকে আরও গতিশীল করবে বলে আশা করছে আকিজ গ্রুপ।
এই ব্যাংক যদি অনুমোদন পায়, তাহলে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং সেবায় ডিজিটাল বিপ্লবের সূচনা হবে বলেই মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

