পাঁচ বছর পর আবারও আকাশপথে যুক্ত হতে যাচ্ছে এশিয়ার দুই পরাশক্তি—ভারত ও চীন। দীর্ঘ বিরতির পর দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু হওয়াকে বিশ্লেষকরা দেখছেন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বড় পদক্ষেপ হিসেবে।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে হিমালয় সীমান্তে ভয়াবহ সংঘর্ষের পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক ছিল টানাপোড়েনে। সে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছিলেন ২০ জন ভারতীয় ও ৪ জন চীনা সেনা, যা দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে গভীর অবিশ্বাসের দেয়াল তুলেছিল।
কিন্তু সেই বরফ এখন ধীরে ধীরে গলছে।
ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক বিমানসংস্থা ইন্ডিগো আগামী রবিবার রাত ১০টায় কলকাতা থেকে চীনের গুয়াংজু পর্যন্ত প্রথম ফ্লাইট চালু করছে।
এটাই দুই দেশের মধ্যে পাঁচ বছর পর প্রথম সরাসরি বাণিজ্যিক উড়ান।
ভারত সরকার জানায়, এ উদ্যোগের ফলে “দুই দেশের সাধারণ মানুষের যোগাযোগ আরও বাড়বে” এবং “দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।”
বর্তমানে ভারত থেকে শুধু হংকং রুটে নিয়মিত ফ্লাইট চলছে। এবার নভেম্বর থেকে নয়াদিল্লি–সাংহাই ও নয়াদিল্লি–গুয়াংজু রুটেও নতুন সরাসরি ফ্লাইট চালু হবে বলে জানানো হয়েছে।
চীনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি বিশাল। ভারতের শিল্প ও রপ্তানি খাতের কাঁচামালের বড় অংশই আসে চীন থেকে।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক তথ্যমতে, গত মাসে চীন থেকে ভারতের আমদানি ১১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, যা এক বছর আগের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি।
বিপরীতে, চীনে ভারত রপ্তানি করেছে মাত্র ১.৪৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু হলে ব্যবসায়িক ভ্রমণ ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ সহজ হবে, যা ভবিষ্যতে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককেও উষ্ণ করবে।
২০২০ সালের সীমান্ত সংঘর্ষের পর ভারত চীনের ওপর একের পর এক নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নেয়।
চীনা বিনিয়োগে কড়াকড়ি আরোপ করে নয়াদিল্লি, এবং টিকটকসহ শতাধিক চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করে দেয়।
পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কোয়াড জোটে (Quad) আরও দৃঢ়ভাবে যুক্ত হয় ভারত—যেখানে জাপান ও অস্ট্রেলিয়াও রয়েছে। লক্ষ্য ছিল স্পষ্ট: এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাবের মোকাবিলা।
তবে এখন দেখা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জটিল সমীকরণে ভারত আবারও বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের পথে হাঁটছে।
এর একটি বড় কারণও আছে—ওয়াশিংটনের সঙ্গে সাম্প্রতিক বাণিজ্যিক টানাপোড়েন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক জটিল হয়ে পড়ে, যার ফলেই চীনের সঙ্গে পুরনো যোগাযোগ আবারও সক্রিয় করার চেষ্টা শুরু হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরাসরি ফ্লাইট চালু হওয়া কেবল পরিবহন নয়—এটি দুই দেশের মধ্যে আস্থা পুনর্গঠনের প্রতীকও।
রাজনৈতিক উত্তেজনা থাকলেও, মানুষের মধ্যে সংযোগ ও বাণিজ্যিক স্বার্থই এখন এই সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
একজন ভারতীয় কূটনীতিকের ভাষায়—
“রাজনীতি একপাশে, কিন্তু মানুষ তো চলাচল করবে, ব্যবসা করবে। ফ্লাইট চালু হওয়া মানে সম্পর্কের দরজা অন্তত খুলে যাওয়া।”

