ডলারের বাজার হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠেছে। গত কয়েকদিনে ডলারের দাম ৫০ পয়সার বেশি বেড়েছে। ফলে টাকার মান কমছে। গত বৃহস্পতিবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের সর্বোচ্চ দাম ছিল ১২২ টাকা ৫০ পয়সা, সর্বনিম্ন ১২২ টাকা ১০ পয়সা। গড় দাম দাঁড়িয়েছে ১২২ টাকা ৪০ পয়সা।
এর আগের দিন গত বুধবার সর্বোচ্চ দাম ছিল ১২২ টাকা ২৫ পয়সা, সর্বনিম্ন ১২২ টাকা, গড় দাম ১২২ টাকা ৬ পয়সা। এক সপ্তাহ আগে ১৬ অক্টোবর ডলারের সর্বোচ্চ দাম ছিল ১২১ টাকা ৮৬ পয়সা, সর্বনিম্ন ১২১ টাকা ৮০ পয়সা। গড় দাম ১২১ টাকা ৮৪ পয়সা। এই হিসাবে এক সপ্তাহে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে ৫৬ পয়সা বা ০.৪৬ শতাংশ। ব্যাংকাররা বলছেন, রমজান মাসকে সামনে রেখে পণ্য আমদানির এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছে। এতে ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া দাম ধরে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামে ডলার কিনেছে। এ কারণেও ডলারের দর বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা পণ্য আমদানির জন্য মোট ৬৩০ কোটি (৬.৩০ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খোলেন। আগের মাস আগস্টে এই অঙ্ক ছিল ৫.৩৮ বিলিয়ন ডলার। এতে ১৭.২৯ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গেছে। ডলারের দর বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোতেও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। খোলা বাজারেও দর বাড়ছে। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক ১২৩ টাকায় নগদ ডলার বিক্রি করেছে; কিনেছে ১২২ টাকায়। বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক ১২৩ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার বিক্রি করেছে; কিনেছে ১২২ টাকা ৫০ পয়সায়। সিটি ব্যাংক বিক্রি করেছে ১২৩ টাকা ৭৫ পয়সায়; কিনেছে ১২২ টাকা ৭৫ পয়সায়।
খোলা বাজারে গত বৃহস্পতিবার ডলার বিক্রি হয়েছে ১২৫ টাকা ২০ পয়সায়। এক সপ্তাহ আগে এই দর ছিল ১২৪ টাকা। মতিঝিলের এক ডলার ব্যবসায়ী বলেন, হঠাৎ ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। এজন্য দাম বেড়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ডলারের দরে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাই এখন এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাইছেন না।
এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, বাজারে ডলারের দাম চাহিদা ও সরবরাহের অসামঞ্জস্যের কারণে বেড়েছে। ব্যাংকগুলো অনেক দিন ধরে ডলার বিক্রি করেছে, যাতে তাদের অবস্থান নিরাপদ থাকে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স সাধারণত মাসের ১৮ থেকে ২৫ তারিখে কিছুটা ধীরগতি দেখায়। গত সপ্তাহে কিছু আমদানিকারক তাদের এলসির বিপরীতে পাওনা পরিশোধ করেছেন। আশা করা হচ্ছে, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ডলারের বাজার স্থিতিশীল হয়ে গড়ে ১২২ টাকায় ফিরে আসবে। ডলারের দর ধরে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামে ডলার কিনেছে। সর্বশেষ ১৪ অক্টোবর ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার, এর আগে ৯ অক্টোবর ১০ কোটি ৭০ লাখ ডলার কেনা হয়। গত তিন মাসে ১৫ দফায় মোট ২১২ কোটি ৬০ লাখ (২.১৩ বিলিয়ন) ডলার কেনা হয়েছে।
বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, এই সময়ে ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা অতিরিক্ত ডলার কেনাই একমাত্র উপায়। বাজারে সরবরাহ বেশি থাকায় না কিনলে ডলারের দর কমে যাবে। এতে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। মুদ্রাবাজারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার পর থেকে ১৩ জুলাই থেকে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনা শুরু হয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় বাজার স্থিতিশীল রাখতে এ ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বছর পার হওয়ার পর প্রবাসী রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয় এবং বিভিন্ন দাতা সংস্থার ঋণে রিজার্ভ স্বস্তির অবস্থায় এসেছে। এছাড়া ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার কেনার কারণে রিজার্ভ বেড়েছে। ৭ সেপ্টেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছিল ২৫.৩০ বিলিয়ন ডলার, মোট ৩০.০৪ বিলিয়ন ডলার। গত দেড় মাসে তা বেড়ে ২২ অক্টোবর ২৭.৩৫ বিলিয়ন ডলার, মোট ৩২.১১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রবাসীরা ৭৫৮ কোটি ৫৬ লাখ (৭.৫৮ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ শতাংশ বেশি। চলতি অক্টোবরেও ধারা বজায় আছে। ১ থেকে ২২ অক্টোবরের মধ্যে ১৯২ কোটি ১০ লাখ (১.৯২ বিলিয়ন) ডলার এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭.৩ শতাংশ বেশি।

