দেশের শিল্পখাত যেন ক্রমেই ধুঁকে পড়ছে কাঁচামাল আর যন্ত্রপাতি আমদানির সংকটে।বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই–সেপ্টেম্বর) শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানির এলসি নিষ্পত্তি আগের বছরের তুলনায় কমেছে প্রায় ১৮ শতাংশ। একই সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতির নিষ্পত্তি কমেছে ১১ শতাংশ।
এই ধস এক বছরের নয়, বরং কয়েক বছরের ধারাবাহিক প্রবণতা। ২০২৪–২৫ অর্থবছরেও এই দুই খাতে আমদানি হ্রাস পেয়েছিল চোখে পড়ার মতো হারে। এখন সেই সংকটে নতুন করে যুক্ত হয়েছে শিল্পের কাঁচামাল খাত।
গত বছরের তুলনায় এবার কাঁচামাল আমদানিতেও প্রবৃদ্ধি থমকে গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে মধ্যবর্তী পণ্যের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৯৪ কোটি ৮৪ লাখ ডলার, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে তা ছিল ১১৫ কোটি ১৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ, কমেছে প্রায় ১৭.৬২ শতাংশ।
মূলধনি যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রেও একই চিত্র—আগে যেখানে ৪৯ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল, এবার তা নেমে এসেছে ৪৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলারে।
একই সময়ে শিল্পের কাঁচামাল খাতে নিষ্পত্তি হয়েছে ৫৭৬ কোটি ৫৬ লাখ ডলার, যা আগের বছরের ৫৮২ কোটি ৬৩ লাখ ডলার থেকে কম।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, মধ্যবর্তী পণ্য হলো উৎপাদনের সেতুবন্ধ; এখানেই গতি থেমে গেলে গোটা শিল্প ব্যবস্থায় প্রভাব পড়ে। আর যন্ত্রপাতির আমদানি কমে যাওয়ার মানে হলো—ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়া।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ সরাসরি বলেন, “দেশে এখনো ব্যবসায়িক আস্থা ফিরে আসেনি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, উচ্চ সুদহার, ব্যাংক খাতে অস্থিরতা—সব মিলিয়ে ব্যবসার গতি মন্থর। এই কারণেই কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্য ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে।”
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না ফিরলে এই প্রবণতা থামবে না। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে ব্যবসায়িক আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
দেশের শিল্পায়ন ও উৎপাদন প্রবৃদ্ধির ভবিষ্যৎ এখন অনেকটাই নির্ভর করছে এই আস্থা ফেরানোর ওপর। কারণ, কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্যের প্রবাহে ছেদ পড়লে দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তিই দুর্বল হয়ে পড়ে—আর সেই লক্ষণ এখন স্পষ্ট।

