দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে দীর্ঘ বিরতির পর মুখোমুখি বৈঠকে বসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। ২০১৯ সালের পর দুই পরাশক্তির এই দুই নেতার মধ্যে এটিই ছিল প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ। বৈঠক শেষে ট্রাম্প ঘোষণা দেন—চীনের ওপর আরোপিত শুল্ক কিছুটা কমানো হবে।
তিনি বলেন, “চীন অবৈধ ফেন্টানিলের রপ্তানি বন্ধ করবে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানি বাড়াবে এবং বিরল খনিজ রপ্তানি চালু রাখবে—এই প্রতিশ্রুতির বিনিময়েই আমরা কিছু শুল্ক কমাচ্ছি।”
রয়টার্স জানায়, বৈঠকটি দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান শহরে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর এয়ারফোর্স ওয়ান বিমানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, “এটা অসাধারণ এক বৈঠক—আমি একে ১০-এর মধ্যে ১২ দেব।”
ট্রাম্প জানান, চীন থেকে আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক ৫৭ শতাংশ থেকে নামিয়ে ৪৭ শতাংশে আনা হবে। বিশেষত ফেন্টানিল উৎপাদনে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্যে শুল্ক কমে হবে ১০ শতাংশ। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট সি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন—ফেন্টানিলের পাচার রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফেন্টানিল একটি শক্তিশালী ব্যথানাশক হলেও এর অপব্যবহারে যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। শুধু ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১২ মাসে এই মাদকের কারণে ৫২ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারায়।
চীন জানায়, তারা আপাতত বিরল খনিজ রপ্তানিতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এক বছরের জন্য স্থগিত রাখবে। এই খনিজগুলো গাড়ি, বিমান ও অস্ত্রশিল্পে অপরিহার্য এবং বাণিজ্যযুদ্ধে চীনের অন্যতম শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত।
এছাড়া দুই দেশ কৃষি-বাণিজ্য বাড়াতে সম্মত হয়েছে। টিকটকের মালিকানা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে যে টানাপোড়েন চলছে, সেটি সমাধানের জন্যও যৌথভাবে কাজ করবে দুই দেশ।
ট্রাম্প বৈঠককে ‘অসাধারণ সাফল্য’ বললেও, বৈশ্বিক বাজারে প্রতিক্রিয়া ছিল বেশ সতর্ক। সাংহাই কম্পোজিট সূচক ১০ বছরের সর্বোচ্চ অবস্থা থেকে কিছুটা নেমে আসে, আর যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিন ফিউচারেও দুর্বলতা দেখা দেয়।
অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিবিদ বেসা ডেডা মন্তব্য করেন, “বাজার ট্রাম্পের মতো উচ্ছ্বসিত নয়—বরং অপেক্ষায় আছে বাস্তব ফলাফলের।”
এদিকে, মার্কিন সিনেটের ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার এক্স-এ (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, “ট্রাম্প চীনের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন—তার কথায় বিশ্বাস করা ভুল হবে।”
বৈঠকের কিছুক্ষণ আগেই ট্রাম্প ৩৩ বছর পর আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশ দেন। তাঁর যুক্তি—রাশিয়া ও চীনের প্রভাব বাড়ছে, তাই যুক্তরাষ্ট্রকেও প্রস্তুত থাকতে হবে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য আশা প্রকাশ করেছে—ওয়াশিংটন এখনো পারমাণবিক পরীক্ষা স্থগিত রাখার নীতি মেনে চলবে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, আগামী এপ্রিল মাসে তিনি চীন সফর করবেন এবং পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে যুক্তরাষ্ট্রে আমন্ত্রণ জানাবেন। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া এই বৈঠককে সি চিন পিংয়ের “কূটনৈতিক সাফল্য” হিসেবে অভিহিত করেছে।

