সারা পৃথিবীর মতো ভারতেরও ধনী–গরিবের ব্যবধান দ্রুত বেড়েছে। একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০০০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ভারতের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর সম্পদ ৬২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের সমাজ ক্রমেই বিভক্ত হচ্ছে। অক্সফামের তথ্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্যসেবা খরচ সামলাতে না পেরে প্রতিবছর ৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যায়। সরকারের দারিদ্র্য বিমোচনমূলক বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থা থাকলেও তা যথেষ্ট নয়।
অন্যদিকে ভারতে ধনীদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। অক্সফামের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ১১৯ জন শতকোটিপতি বসবাস করছে। ২০০০ সালে সংখ্যা ছিল মাত্র ৯। ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের শীর্ষ ধনীর মধ্যে একজন গৌতম আদানি একসময় বিশ্বের দ্বিতীয় ধনীর আসনে ছিলেন। তাঁর আগে ছিলেন কেবল ইলন মাস্ক। অর্থনীতিবিদ জয়তী ঘোষ ডয়েচে ভেলেকে বলেন, ভারতে জাতি, ধর্ম ও বর্ণভিত্তিক বৈষম্য অনেক আগে থেকেই ছিল। তবে এখন দেখা যাচ্ছে অর্থনৈতিক অসমতা দ্রুত বেড়েছে, বিশেষ করে গত দুই দশকে।
বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি–২০-ও এই তথ্য তুলে ধরেছে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০০ সালের পর বিশ্বে নতুন সৃষ্ট সম্পদের ৪১ শতাংশই শীর্ষ ১ শতাংশ মানুষের হাতে গিয়েছে। নিচের সারির মানুষের সম্পদ বৃদ্ধিও তেমন হয়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০০ সালের পর নিচের ৫০ শতাংশ মানুষের সম্পদ মাত্র ১ শতাংশ বেড়েছে। অর্থাৎ শীর্ষ ১ শতাংশ মানুষের সম্পদ গড়ে নিচের ৫০ শতাংশের তুলনায় ২,৬৫৫ গুণ বেড়েছে। এই তথ্য দেবে জি–২০-এর ওয়াল্ড ইনইকুয়ালিটি ল্যাব।
জি–২০-এর টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অসমতা পর্যবেক্ষণের জন্য নতুন প্যানেল গঠন করা উচিত। এ প্যানেল সরকার ও নীতিনির্ধারকদের পরামর্শ দেবে। কারণ, উচ্চ অসমতার দেশগুলোতে গণতন্ত্র ও রাজনীতির ক্ষতি হয়। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিতসও বলছেন, অসমতা শুধু সামাজিক সমস্যা নয়, এটি রাজনীতি ও অর্থনীতির জন্যও ক্ষতিকর। বর্তমানে জি–২০-এর সভাপতি দক্ষিণ আফ্রিকার সিরিল রামাফোসা। তিনি স্টিগলিতসের নেতৃত্বে গ্লোবাল ইনইকুয়ালিটি বিষয়ক বিশেষ কমিটি গঠন করেছেন। চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত রামাফোসা সভাপতি থাকবেন। এরপর দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রতিবেদনে কোভিড–১৯, ইউক্রেন যুদ্ধ ও বাণিজ্যবিরোধকে ‘অর্থনৈতিক ঝড়’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব ঝড়ে দারিদ্র্য ও অসমতা আরও বাড়ে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বের শতকোটিপতিদের সম্পদ ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে, কিন্তু প্রতি চারজনের মধ্যে একজন মানুষ নিয়মিতভাবে কম খাচ্ছেন। বিশ্বে দারিদ্র্য হ্রাসের গতি ২০২০ সালের পর কমে গেছে। ২০১৯ সালে যেখানে ৩৩ কোটি ৫০ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটে ছিল, এখন সংখ্যা বেড়ে ২৩০ কোটিতে পৌঁছেছে।
মার্কিন শীর্ষ ধনীর সম্পদও দ্রুত বেড়েছে। অক্সফামের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর শীর্ষ ১০ মার্কিন শতকোটিপতির সম্পদ বেড়েছে ৬৯৮ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৮৫ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। এটি বাংলাদেশের বাজেটের প্রায় ১০.৮ গুণ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি ধনী–গরিবের ফারাক বাড়িয়েছে। তবে ক্রমবর্ধমান অসমতার জন্য ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান—উভয়কেই দায়ী করা হয়েছে।

