জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে কর্মী প্রেরণ আগের মাসের তুলনায় ১৮.৪৬ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫.৬ শতাংশ কমেছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূল কারণ সৌদি আরবের ‘স্কিল ভেরিফিকেশন প্রোগ্রাম’ (এসভিপি)। এই প্রোগ্রামের আওতায় অদক্ষ কর্মীদের জন্য দক্ষতা সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রোগ্রামটি সৌদিতে ‘তাকামুল’ নামে পরিচিত।
অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৭৮ হাজার ২৭ জন কর্মী বিদেশ গেছেন। সেপ্টেম্বর মাসে এই সংখ্যা ছিল ৯৫ হাজার ৬৯৪ জন।
গত মাসে সৌদি আরব বাংলাদেশের সর্বোচ্চ কর্মী নিয়োগ করেছে। তবে সেখানে পাঠানো কর্মীর সংখ্যা সেপ্টেম্বরের তুলনায় ৩২ শতাংশ কমে ৪০ হাজার ৬১২ জনে নেমেছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা)-এর সাবেক মহাসচিব শামীম হোসেন চৌধুরী বলেন, “তাকামুল সনদের বাস্তবায়নের ফলে প্রক্রিয়াটি ধীর হয়ে গেছে। লোডার-আনলোডারের মতো অদক্ষ কর্মীদেরও এখন দক্ষতা সনদ লাগছে। বিএমইটি ও সৌদি কর্তৃপক্ষের চলতি প্রক্রিয়া এখনও পুরো চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট দ্রুত নয়।”
বর্তমানে সৌদি সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে বাংলাদেশের ২৬টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) ৭৩টি ট্রেডে এসভিপি পরিচালনার অনুমোদন পেয়েছে। বিএমইটি দেশের মোট ১১০টি টিটিসি পরিচালনা করে।
বিএমইটির পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ইঞ্জিনিয়ার সালাহ উদ্দিন বলেন- “আমরা অনুমোদিত টিটিসির সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু সৌদি কর্তৃপক্ষের নিজস্ব নিয়ম রয়েছে, যা সময়সাপেক্ষ। অনুমোদন বাড়ালে আরও বেশি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে। গত মাসে আমরা প্রায় ৫২ হাজার পরীক্ষা নিয়েছি। চাহিদা বাড়লে আরও পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষমতা আমাদের আছে।”
সৌদি আরব সম্প্রতি অদক্ষ কর্মীদের জন্য এসভিপি বাধ্যতামূলক করেছে। তবে বাংলাদেশের অনুরোধে পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ কিছু নির্দিষ্ট শ্রেণির জন্য শর্তটি সাময়িকভাবে শিথিল করা হয়েছে।
অন-অফিসিয়াল হিসাব অনুযায়ী, সৌদি আরব এখনও বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। দেশে ৩২ লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন। এদের ৮০ শতাংশের বেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নির্মাণ শ্রমিক ও গৃহকর্মী হিসেবে অদক্ষ কাজে নিয়োজিত। তাদের মাসিক আয় সাধারণত ৩০ ডলারের মতো।
অন্য গন্তব্য দেশে কর্মী নিয়োগ সীমিত। অক্টোবর মাসে বাংলাদেশের শীর্ষ দশ বিদেশ গন্তব্যের মধ্যে ছিল কাতার, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপ, কম্বোডিয়া, কুয়েত ও জর্ডান। সেখানে প্রেরিত কর্মীর সংখ্যা ১ হাজার ৩৮০ থেকে ১১ হাজার ৪০০ জনের মধ্যে ওঠানামা করেছে। মালয়েশিয়া, ওমান ও বাহরাইনের মতো পুরনো শ্রমবাজারে প্রায় কর্মী পাঠানো বন্ধ রয়েছে।
করোনা মহামারির আগে প্রতি মাসে গড়ে ৬০-৭০ হাজার বাংলাদেশি বিদেশে যেতেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১ লাখে পৌঁছেছে।
রেমিট্যান্স প্রবাহও বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে প্রবাসীরা দেশে ২.৫৬ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে রেমিট্যান্স ছিল ২.৪ বিলিয়ন ডলার।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বাংলাদেশ পেয়েছে ১০.১৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮.৯ বিলিয়ন ডলার।
ব্যাংকাররা বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল এবং অবৈধ হুন্ডি চ্যানেলের প্রভাব কমেছে। ফলে বৈধ ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে রেমিট্যান্স বেড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংকের বিনিময় হার এখন খোলা বাজারের প্রায় সমান। এর ফলে প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন।

